মাছের ডিম নিষিক্তকরণ ও পরবর্তী রেণুর পরিচর্যা

 নিষিক্তকরণ একটি পদ্ধতি। প্রত্যেক প্রাণীর পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গের হয়ে থাকে। সাধারণতঃ স্ত্রীর জরায়ুতে ডিম এবং পুরুষ প্রাণির অ-কোষে জন্ম নেয় শুক্রানু। 

কৃত্রিম উপায়ে ডিম নিষিক্তকরণ পদ্ধতি


  • স্বাভাবিক পদ্ধতি
  • চাপ পদ্ধতি বা স্ট্রিপিং পদ্ধতি

স্বাভাবিক পদ্ধতি


পরিপক্ক ব্রুড মাছের দেহের সাধারণত আন্তঃ মাংসপেশীয় হরমোন ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। তাছাড়াও, অন্তগহ্বরীয় ইনজেকশন মাছের শ্রেণী পাখনা বা বক্ষ পাখনার গোড়ায় দেয়া হয়। আবার মাছের পাখনার নিচে ও উপরেও ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়।

এ পদ্ধতি খুব সহজ ও অধিক কার্যকর। আন্তঃ মাংসপেশীয় ইনজেকশনের ক্ষেত্রে আঁইশের নিচে প্রথমে দেহের সমান্তরাল ও পরে ৪৫০ কোণে সুঁচ প্রবেশ করানো হয়। হরমোন ইনজেকশন দেয়া স্ত্রী মাছকে ব্রিডিং পুলে শ্রোত যুক্ত ফোয়ারায় রাখতে হবে। পুরুষ মাছকে হরমোন ইনজেকশন দেয়ার পর অন্য একটি ব্রিডিং পুলে শ্রোত ও ফোয়ারা সহকারে স্ত্রী মাছ হতে বিচ্ছিন্নভাবে রাখতে হবে। স্ত্রী মাছের ডিম ছাড়ার ২ ঘন্টা পূর্বে পুরুষ মাছকে স্ত্রী মাছের ব্রিডিং পুলে স্থানান্তর করতে হবে। স্ত্রী মাছ পুরুষ মাছের সাহচর্যে ডিম পাড়বে ও পুরুষ মাছ শুক্রানু ছাড়বে এবং ডিম নিষিক্ত হবে।

নিষিক্ত ডিমের পানি শোষন সম্পূর্ণভাবে শেষ না হওয়া পর্যন্ত (প্রায় ২ থেকে ২.৫ ঘন্টা পর্যন্ত) অপেক্ষা করতে হবে। ‘এই সময়টুকু অপেক্ষা না করলে ডিম নষ্ট হয়ে যাবে। তাই এসময় নিষিক্ত ডিম হ্যাচিংয়ে  রাখতে হবে। প্রতিকেজি স্ত্রী ও পুরুষ  ব্রুড মাছ কে এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন দিয়ে নিতে হবে। প্রতি কেজি মাছের জন্য  ০.২ সিসি হারে রেনামাইসিন প্রয়োগ করতে হবে। 

স্ট্রিপিং পদ্ধতি


হরমোন দেয়া রেণু গুলোকে আলাদা ব্রিডিং পুলে রাখতে হবে খেয়াল রাখতে হবে  এন সেই ব্রিডিং পুলে স্বাভাবিক গতির স্রোত ও ফোয়ারা থাকে। যখন স্ত্রী মাছ ডিম দিবে সে সময় স্ত্রী ব্রুড মাছকে ধরতে হবে। মাছের পেটে সামান্য চাপ দিলে ডিম বের হবে সেই ডিম একটি প্রাত্রে সংগ্রহ করে রাখতে হবে। এবার পুরুষ মাছ কে ধরে তার পেটে চাপ দিয়ে বীর্য বের করে নিতে হবে। পরবর্তীতে ডিমের উপর বীর্য মিশিয়ে নিষিক্ত করতে হবে।। নিষিক্ত হওয়া ডিমে প্রচুর পরিমাণে পানি ঢালতে হবে যতক্ষণ না ডিমের পানি শোষণ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা দেরী করা যেতে পারে।

 

মাছের ডিম প্রস্ফুটনের সময়কাল


মাছের তাপমাত্রা ও জাত ভেদে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে সময় লাগে-

কমন কার্প ও মিরর কার্প= ৩৬-৭২ ঘন্টা

সরপুঁটি মাছ= ৮-১০ ঘন্টা

বিগহেড মাছ= ২০-২৪ ঘন্টা

রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার, কার্প, গ্রাস কার্প ও বাটা মাছ= ১৬-২০ ঘন্টা

 

প্রস্ফুটনকালীন সতর্কতা


এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করার সময় বাড়তি সতর্কতা নিতে হয়। পানির প্রবাহ ঠিমতো চলছে কিনা তা লক্ষ্য রাখতে হবে। শতকরা ৫ ভাগ মাছের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে পানির প্রবাহ সেসময় ১০ মিনিট বন্ধ রাখা জরুরী। ১০ মিনিট বন্ধ করে রাখার পর পুনরায় পানির প্রবাহ আবার চালু করে দিতে হবে। ফলে সব ডিম দ্রুত ফুটে পোনা বের হবে। পোনা ফুটে বের হওয়ার পর ডিমের খোলস পচঁতে শুরু করবে বিধায় ডিম পোনাকে অন্য একটি পরিস্কার জারে সরিয়ে দিতে হবে।

ডিমের পানি শোষন (ওয়াটার হার্ডনিং) হওয়ার পর থেকে ডিম পোনার কুসুম থলি শোষিত না হওয়া পর্যন্ত ০৩ (তিন) বার ০১:০২ পিপিএম ম্যালাকাইট গ্রীণ দ্বারা ডিম/ডিম পোনা শোধন করতে হবে। 

রেণু পোনার প্রাথমিক খাদ্য ও প্রয়োগ


প্রজাতিভেদে ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নিষিক্ত ডিম ১৬ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে ফুটে রেণু পোনায় রূপান্তরিত হয়। এ অবস্থায় এদের সাথে কুসুম থলি থাকে। এরা কুসুম থলি থেকে পুষ্টি পায়। ডিম ফোটার ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে কুসুম মিলিয়ে যাওয়ার পর এদেরকে বাহির থেকে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। একে প্রাথমিক খাদ্য বলে। প্রাথমিক খাদ্য হিসেবে হাঁস-মুরগির ডিমের কুসুম অথবা জীবন্ত খাবার, প্রাণিজ খাদ্য ক্ষণা দিতে হবে।

৫ লক্ষ পোনার জন্য প্রতি ৪ ঘন্টা অন্তর অন্তর ১টি সিদ্ধ ডিমের কুসুম ব্লেন্ডার করে খাদ্য হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে। সরপুটি মাছের রেনু প্রতিকেজিতে প্রায় ৮-১০ লক্ষ হয়ে থাকে। এছাড়াও গ্রাস কার্প, সিলভার এবং বিগিহেড মাছের রেনু প্রতি কেজিতে প্রায় ২-৩.৫ লক্ষ হয়ে থাকে। রুই মৃগেল ও কাতলা হয় ৩- ৫ লক্ষ

রেণু পোনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা


ডিম ফুটানোর জলধারকে প্রতি লিটার পানিতে ১০০ মি. গ্রা. ম্যানাকাইট গ্রীণ দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। কেউ চাইলে  ২০% ফরমালিন দিয়েও জলাধারকে জীবাণুমুক্ত করতে পারে। ডিম জীবাণুমুক্ত করার জন্য ১০০ মিলিগ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে। এসময় খেয়াল রাখত এহবে যেন জলাধারে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের সরবরাহ বজায় থাকে।

 অনুকূল পিএইচ (চঐ) ৭.০-৮.৫ ও তাপমাত্রা ২৭-২৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস সংরক্ষণ করা উত্তম। সঠিক ঘনত্বে (১০০০/লিটার) রেণু মজুদ করা উচিত। জলাধার ময়লা আবর্জনামুক্ত রাখতে হবে। এজন্য সাইফনিং করতে হবে। পরিমিত খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।



Shaharuk Islam

Hi I am Shaharuk Islam. I enjoyed in writing articles and spread knowledge cross over the internet.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

Ad

Magspot Blogger Template

Ad

amazon.in
amazon.in

نموذج الاتصال