অশোকের ধর্মের বৈশিষ্ট্য

 → অশোকের ধর্মপ্রচার : 

কলিঙ্গ-জয়ের দুই বৎসর পর অশোক বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন এবং এই ধর্মের একজন উৎসাহী পৃষ্ঠপোষকে পরিণত হন। তাঁর উদ্যোগে উত্তর ভারতের একটি সংকীর্ণ স্থানে আবদ্ধ বৌদ্ধধর্ম বিশ্বধর্মে রূপান্তরিত হয়। ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি নানা ব্যবস্থা অবলম্বন করেছিলেন।    


                   




ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে     


(১) তিনি 'বিহারযাত্রা' অর্থাৎ শিকার ও প্রমোদ ভ্রমণ বন্ধ করে দিয়ে তার পরিবর্তে ‘ধর্মযাত্রা শুরু করেন। ধর্মযাত্রা-র অর্থ হল ভগবান বুদ্ধদেবের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলি পরিভ্রমণ কর। এই যাত্রার সময় তিনি ব্রাহ্মণ ও শ্রমণদের দান-ধ্যান করতেন ও জনসাধারণের উদ্দেশ্যে ভগবান বুদ্ধের বাণী প্রচার করতেন। 

(২) প্রজাদের মধ্যে ধর্মবোধ জাগ্রত করার 'বিহারযাত্রা'-র পরিবর্তে 'ধর্মযাত্রা' উদ্দেশ্যে তিনি তাদের হস্তী-দশনা, বিমান-দশনা, অগ্নিখণ্ডানি প্রভৃতি অলৌকিক দৃশ্য এবং প্রচার করতেন যে, যথার্থ ধর্মপালনের মাধ্যমে নানা অলৌকিক শক্তি অর্জন অলৌকিক দৃশ্যাদি করা যায়। তিনি স্ত্রীলোকদের অর্থহীন মঙ্গলানুষ্ঠানগুলির (অসুস্থ হলে, পুত্র-কন্যার বিবাহে, পুত্রের জন্ম হলে বা যাত্রারম্ভকালে) স্থলে তাঁদের যথার্থ ‘ধর্মমঙ্গল’ প্রবর্তনের কথা বলেন।
 (৩) তাঁর একার পক্ষে এত বড় সাম্রাজ্যে ধর্মপ্রচার করা সম্ভব নয় এবং এই কারণে তিনি যুত, রাজুক, পুরুষ, প্রাদেশিক প্রভৃতি রাজকর্মচারীদের সাহায্য গ্রহণ করতে শুরু করেন। এই সকল কর্মচারীদের তিনি প্রতি তিন ও পাঁচ বছর অন্তর সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করে ধর্মপ্রচারের নির্দেশ দেন। 
(৪) তিনি 'ধর্মমহামাত্র' নামে এক বিশেষ শ্রেণীর কর্মচারী নিযুক্ত করেন। তাঁদের কাজ ছিল ভগবান বুদ্ধের বাণী প্রচার, মঙ্গল সাধন করা। অশোকের পঞ্চম শিলালিপিতে ধর্মমহামাত্রদের কাজকর্মের বিশদ তালিকা আছে।
 (৫) সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে পর্বতগাত্রে ও প্রস্তরস্তম্ভে তিনি বুদ্ধদেব ও তাঁর নিজের উপদেশগুলি খোদাই করে জনসাধারণের মধ্যে জনহিতৈষণামূলক তা প্রচার করার ব্যবস্থা করেছিলেন। এগুলি 'ধর্মলিপি' নামে পরিচিত। গ্রহণ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপন এবং প্রজাবর্গের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক ধর্মমহামাত্র, ধর্মলিপি
(৬) জন-হিতৈষণামূলক কর্ম তাঁর ধর্মপ্রচারের অন্যতম অঙ্গ ছিল। সর্বজীবের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক—সর্বাঙ্গীণ মঙ্গলসাধনই তাঁর লক্ষ্য ছিল। রাস্তার দু'পাশে বৃক্ষরোপণ, বিশ্রামাগার স্থাপন, কূপ খনন, মানুষ ও পশুর জন্য
ছিল।
 (৭) বৌদ্ধধর্মের বিশুদ্ধতা এবং বৌদ্ধ সঙ্ঘের ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে তিনি পাটলিপুত্রে তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতি-র অধিবেশন আহ্বান করেন। বলা বাহুল্য, এর ফলে বৌদ্ধ সঙ্ঘ আশু বিচ্ছেদের হাত থেকে রক্ষা পায়।
 (৮) কেবলমাত্র নিজ সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরেই নয় – সুদূর দক্ষিণের কেরলপুত্র, সত্যপুত্র, চোল, পাণ্ড্য প্রভৃতি দেশে তিনি ধর্মদূত পাঠান। তাঁর ত্রয়োদশ শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, তিনি পাঁচটি গ্রিক-শাসিত রাজ্য— সিরিয়ার অধিপতি অ্যান্টিওকাস থিয়স, ম্যাসিডন-রাজ অ্যান্টিগোনাস গোনেটাস, করিন্থ বা এপিরাসের রাজা আলেকজান্ডার, মিশর-রাজ টলেমি ফিলাডেলফাস এবং সাইরিন (আফ্রিকা)-এর অধিপতি মেগাসের কাছে মহারক্ষিত নামে জনৈক ধর্মদূতকে পাঠিয়েছিলেন। 
অশোক নিজেই দাবি করেছেন যে, তাঁর রাজধানী থেকে ৩০০ যোজন ব্যাস নিয়ে সর্বত্রই তাঁর ধর্মবিজয় সফল হয়। ঐতিহাসিক সান্ডার্স বলেন যে, তাঁর ধর্মপ্রচারকগণ এশিয়া, ইওরোপ ও আফ্রিকার কুসংস্কারাচ্ছন্ন। অধিবাসীদের মনে কুষ্টিমূলক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হন। এইচ. জি. ওয়েলস-এর মতে, অশোক তাঁর কাজের জন্য “ভল্গা থেকে জাপান পর্যন্ত সর্বত্র এখনও সম্মানিত হচ্ছেন।”

Shaharuk Islam

Hi I am Shaharuk Islam. I enjoyed in writing articles and spread knowledge cross over the internet.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

Ad

Magspot Blogger Template

Ad

amazon.in
amazon.in

نموذج الاتصال