‘ভারতবর্ষ’— নামকরণঃ হল যেমন করে .
আমাদের পরম প্রিয় মাতৃভূমি 'ভারতবর্ষ' বিশ্বের এক প্রাচীনতম দেশ। প্রাচীন সাহিত্য রামায়ণ, মহাভারত ও বিভিন্ন পুরাণে এই পবিত্রভূমির উল্লেখ আছে। বলা হয় যে, প্রাচীনকালে ভরত নামে এক রাজা এদেশে রাজত্ব করতেন। তাঁর নাম থেকে এই দেশের নাম হয় ভারতবর্ষ। বিষ্ণুপুরাণ-এ বলা হচ্ছে যে, যে-দেশ সমুদ্রের উত্তরে ও হিমালয়ের দক্ষিণে তার নাম ভারতবর্ষ। এখানে ভরতের সন্তানেরা ('ভারতী') বাস করে। আধুনিক ঐতিহাসিক ডঃ রামশরণ শর্মা (Dr R. S. Sharma) বলেন যে, ভরত নামে এক প্রাচীন উপজাতির নাম অনুসারে এই দেশের নাম হয় ভারতবর্ষ এবং ভারতবর্ষের মানুষের নাম হয় 'ভারত-সন্ততি’(বা উত্তর-পুরুষ)। বিদেশিদের কাছে আমাদের দেশ ‘ইন্ডিয়া' নামে পরিচিত। এই নামটি সংস্কৃত ‘সিন্ধু' শব্দ থেকে উদ্ভূত। বিদেশিরা সিন্ধুনদের তীরবর্তী ভারতীয়দের সঙ্গে প্রথম পরিচিত হয়েছিল এবং সিন্ধুনদের নাম অনুসারেই তারা নামকরণ করে। প্রাচীন পারসিকরা সিন্ধুকে উচ্চারণ করত ‘হিন্দু’। এ থেকেই সে-যুগে ভারতীয়দের সাধারণ নাম হয় 'হিন্দু' এবং কালক্রমে এদেশের নাম হয় 'হিন্দুস্থান' বা হিন্দুদের বাসভূমি। গ্রিক ও রোমানরা 'হিন্দু'-কে উচ্চারণ করত 'ইন্দুস্' (Indus) বলে। প্রাচীন এই ইন্দুস’ থেকেই আধুনিক 'ইন্ডিয়া' নামের উৎপত্তি।
ইতিহাস ও ভূগোলের সম্পর্ক :
ইতিহাসের সঙ্গে ভূগোলের সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ঠ। প্রত্যেক দেশের ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি বহুল পরিমাণে সেই দেশের ভৌগোলিক পরিবেশের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতাকে ‘নীল নদের দান'বলা হয়। প্রাচীন সুমের ও মেসোপটেমিয়ার সভ্যতায় টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর গুরুত্ব অসীম। পর্বত সঙ্কুল পরিবেশের জন্য প্রাচীন গ্রিসে প্রচুর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নগর-রাষ্ট্র গড়ে ওঠে এবং গ্রিসদেশ সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ায় তার অধিবাসীরা সামুদ্রিক বাণিজ্য ও উপনিবেশ বিস্তারে তৎপর হয়। পরবর্তীকালে ইংলন্ডের পৃথিবীব্যাপী সামুদ্রিক বাণিজ্য ও উপনিবেশ স্থাপনের মূলেও ছিল তার ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাব। ফরাসী দার্শনিক বোডিন মন্তব্য করেছেন যে
“ভূগোল ও আবহাওয়া বিভিন্ন জাতির ভাগ্য নির্ধারণ করে।” বলা বাহুল্য, ভারতের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
(১উত্তরং যৎ সমুদ্রস্য হিমাদ্রেশ্চৈব দক্ষিণম্।
বর্ষং তদ্ভারত নাম । ভারতী যত্র সন্ততিঃ ॥ (বিষ্ণু পুরাণ, ২/৩/১) 21 Ancient India, Dr. R. S. Sharma,