জী বদেহে নানান জৈবিক কাজের জন্য শক্তির প্রয়োজন হয়, এই শক্তির উৎস হল খাদ্য। সবুজ উদ্ভিদেরা পরিবেশ থেকে অজৈব উপাদান শোষণ করে সালোক সংশ্লেষ পদ্ধতিতে নিজের দেহেই খাদ্য সংশ্লেষ ক'রে তার মধ্যে সৌরশক্তিকে স্থিতিশক্তি রূপে আবদ্ধ করে। শ্বসনের সময় এই শক্তি তাপশক্তি রূপে মুক্ত হয় এবং বিভিন্ন বিপাক ক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। পরভোজী প্রাণীরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদজাত খাদ্য গ্রহণ করে। গৃহীত জটিল খাদ্য উৎসেচকের প্রভাবে পাচিত হয়ে সরল খাদ্যে পরিণত হয়। পাচিত খাদ্য শোষিত হয়ে একসময় সজীব কোষের প্রোটোপ্লাজমের অংশবিশেষে পরিণত হয়, একেই আত্তীকরণ বলে। পরিপাকের পর অপাচ্য খাদ্য দেহ থেকে বর্জিত হয়, অর্থাৎ অপাচ্য খাদ্যের বহিষ্করণ ঘটে।
এক কথায়—খাদ্য গ্রহণ, পরিপাক, শোষণ, আত্তিকরণ এবং বহিষ্করণের মাধ্যমে জীব দেহের বৃদ্ধি ঘটানো, ক্ষয়পূরণ করা এবং বিভিন্ন বিপাক ক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন করার ধারাবাহিক ও সম্মিলিত পদ্ধতির নামই হল পুষ্টি।
পুষ্টির সংজ্ঞা (Definition of Nutrition) :
যে ধারাবাহিক ও সম্মিলিত উপচিতি বিপাক পদ্ধতিতে খাদ্য গ্রহণ, তার পরিপাক, শোষণ, আত্তীকরণ ও বহিষ্করণের মাধ্যমে (প্রাণীদের ক্ষেত্রে) অথবা সংশ্লেষ ও আত্তীকরণের মাধ্যমে (উদ্ভিদের ক্ষেত্রে) জীবদেহের প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন, ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটে এবং জীবনের মৌলিক ধর্মগুলি সুষ্ঠভাবে পালিত হয়, তাকেই পুষ্টি বলে।
পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা (Importances of Nutrition) :
জীবদেহে পুষ্টির গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তাগুলি হল :
(i) পুষ্টির মাধ্যমে দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ এবং পরিস্ফুটন ঘটে।
(ii) পুষ্টির মাধ্যমে খাদ্যস্থ স্থৈতিক শক্তি ব্যবহারোপযোগী শক্তিতে রূপান্তরিত হয়, ফলে জীবদের চলন-গমন, রেচন, জনন ইত্যাদি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলি সম্পন্ন হওয়ার মাধ্যমে জীবনের মৌলিক ধর্মগুলি সুষ্ঠভাবে পালিত হয়।
(iii) পুষ্টির মাধ্যমে জীবদেহে রোগ-প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে ওঠে।
(iv) পুষ্টির মাধ্যমে জীবদেহে ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য সঞ্চিত থাকে, যা ভবিষ্যতে খাদ্যের অভাব ঘটলে দেহে শক্তি উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়।
(v) প্রাণিদেহে তাপ উৎপাদন এবং সংরক্ষণেও পুষ্টির বিশেষ ভূমিকা আছে।