মুসলিম আইনে বিয়ের যত নিয়ম-কানুন

                

 বিবাহ ও দাম্পত্য জীবন 

সাধারণত বিবাহ বা বিয়ে হল একটি সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি যার মাধ্যমে দু'জন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বিভিন্ন দেশে সংস্কৃতিভেদে বিবাহের সংজ্ঞার তারতম্য থাকলেও সাধারণ ভাবে বিবাহ এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে দু'জন মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও যৌন সম্পর্ক সামাজিক স্বীকৃতি লাভ করে।


                                                                              আল্লাহ     তা'আলার সেরা সৃষ্টি মানব জাতি। এ জাতির বংশধারা অন্তিমকাল অবধি চলতে থাকুক, এটা আল্লাহর ইচ্ছা। সুতরাং আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছানুসারেই মানবজাতিকে তার বংশ বিস্তার করে যাওয়া চাই। অবশ্য এ উদ্দেশ্য সাধন করতে মানবজাতি তার শ্রেষ্ঠত্ব ও সভ্যতাকে বজায় রেখে এমন একটি পন্থা বা উপায় গ্রহণে বাধ্য, যা তার জন্য সামঞ্জস্যশীল এবং শোভনীয়। মানব সন্তান জন্মলাভের সেই পন্থা বা উপায়েরই অপর নাম বিবাহ। বিবাহ ছাড়া মানব সন্তান জন্মদানের যে কোনো বিকল্প পথ সভ্য মানুষ গ্রহণ করতে পারে না। এ কারণেই আমাদের নবী (সা.) বিবাহের জন্য কঠোর নির্দেশ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রদান করেছেন। তা ছাড়া এ ব্যাপারে বিভিন্ন হাদীসে বিবাহের বহু ফজিলতের কথা উল্লিখিত হয়েছে । নিম্নে এ প্রসঙ্গের কতিপয় হাদীসের অনুবাদ উদ্ধৃত হলো- 
১. হাদীস : হুযূর (সা.) বলেছেন— বিবাহ আমার সুন্নত। যে আমার সুন্নতকে প্রত্যাখ্যান করবে, সে আমার উম্মত নয়।অন্য হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, হুযূর (সা.) বলেছেন— তোমরা বিবাহ করো, তাহলে আমার উম্মতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আমার উম্মতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে আমি অন্যান্য উম্মতদের মোকাবেলায় গৌরব করতে পারব। তোমাদের মধ্যে যারা স্বচ্ছল বা সঙ্গতিসম্পন্ন বা যাদের এ পরিমাণ অর্থ সম্পদ আছে যে, তদ্বারা তারা স্ত্রী ও পরিবার-পরিজন পরিচালনা করতে পারে তাদের বিবাহ করা উচিত, আর যাদের সঙ্গতি নেই তাদের রোজা রাখা উচিত।
হাদীসের মর্মানুসারে একটি মাসআলার সমাধান এই যে, যে পুরুষের কামোত্তজনা প্রবল নয় কিন্তু বিবাহের খরচ বহন করতে পারে তার জন্য বিবাহ সুন্নত। আর যার কামোত্তেজনা প্রবল এবং সঙ্গতিও আছে তার জন্য বিবাহ ওয়াজিব । পক্ষান্তরে সঙ্গতি নেই কিন্তু কামোত্তেজনা প্রবল, এমতাবস্থায় বিবাহের বদলে রোজা রাখা চাই। তারপর সঙ্গতি আসলে বিবাহ করবে। 
২. হাদীস : অন্য হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি বিবাহ করল না, সে আমার দলভুক্ত নয় । এ হাদীসের মর্মানুসারে বিবাহ করা ওয়াজিব রূপে গণ্য করা হয়েছে। 
৩. হাদীস ঃ বিবাহিত ব্যক্তির ইবাদতের মূল্য অবিবাহিত ব্যক্তির ইবাদত অপেক্ষা বেশি। অন্য হাদীসে আছে, বিবাহিত ব্যক্তির নিদ্রা অবিবাহিত ব্যক্তির ইবাদতের তুল্য। 
৪. হাদীস : অপর হাদীসে আছে, স্ত্রী-পুত্র সম্পন্ন ব্যক্তির দুই রাকআত নামাজ, স্ত্রী-পুত্রহীন ব্যক্তির বিরাশি, বর্ণনান্তরে সত্তর রাকআত নামাজের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
৫. হাদীস : হাদীস আছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার নিষিদ্ধ কুনজর, কুচিন্তা ও কুকর্ম ইত্যাদি পাপ কাজ হতে আত্মা এবং চরিত্রকে পবিত্র রাখতে আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর তাবেদারির নিয়তে বিবাহ করবে, তার পারিবারিক সাহায্যের দায়িত্ব আল্লাহ গ্রহণ করেছেন।
৬. হাদীস : স্বামী যখন (প্রীতির নজরে) স্ত্রীর দিকে তাকায় এবং স্ত্রी যখ (ঐরূপে) স্বামীর দিকে তাকায়, তখন আল্লাহ তাদের উভয়ের ওপর খাস রহমতের দৃষ্টি প্রদান করেন। কারণ সচ্চরিত্রবান স্বামী নিজের স্ত্রীর দিকেই তাকায়, তা ছাড়া অন্য কোনো স্ত্রীলোকের দিকে তাকায় না এবং সচ্চরিত্রবতী স্ত্রী নিজের স্বামীর দিকেই তাকায়, তা ছাড়া অন্য কোনো পুরুষের দিকে তাকায় না। আর কেবল বিবাহের দ্বারাই এ অবস্থা ঘটতে পারে।
৭. হাদীস : রোজ কিয়ামতে কোনো কোনো ব্যক্তির মর্তবা বেহেশতের মধ্যে আশাতীতভাবে বৃদ্ধি পাবে। তখন তারা অবাক হয়ে বলবে, হে মাবুদ! আমরা তো এমন কোনো আমল করিনি, যার কারণে এমন মর্তবার অধিকারী হতে পারি। বলা হবে, তোমাদের সন্তানদের দোয়ার কারণে মর্তবা এতটা বেড়ে গেছে।
৮. হাদীস ঃ যে সন্তান গর্ভপাত হয়ে মারা যায়, সে তার পিতামাতার জন্য আল্লাহর সাথে জিদ ধরে বলবে যে, আমার পিতামাকে দোজখ হতে মুক্তিদান করে বেহেশতে প্রবেশ করাতে হবে। তখন আল্লাহ দয়ার্দ্র হৃদয় হয়ে বলবেন, ওহে জেদী সন্তান ! নাও এই নাও, তোমার পিতামাকে বেহেশতে নিয়ে যাও। তখন সে তার পিতামাকে সাথে নিয়ে বেহেশতে ঢুকবে।
বুঝা গেল, গর্ভপাতের সন্তানও পিতামাতার উপকারে আসবে। আর এ ফজিলতও অর্জিত হবে একমাত্র বিবহের অসিলায়।
৯. হাদীস : অন্য হাদীসে এসেছে, শিশু সন্তান বেহেশতের (অনুপম) ফুল সদৃশ, অর্থাৎ বেহেশতের ফুল পেলে মনে যে অফুরন্ত আনন্দ এবং খুশি লাভ হয়, সন্তান-সন্ততি লাভ করেও মানুষ তদ্রূপ আনন্দ ও খুশি লাভ করে। একমাত্র বিবাহ ব্যতীত সন্তান লাভের দ্বিতীয় উপায় নেই। কাজেই বলা যেতে পারে যে, বিবাহের মাধ্যমেই মানুষের বেহেশতের ফুল লাভ করা সম্ভব হবে।
১০. হাদীস ঃ এক হাদীসে হুযূর (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমি আমার পরে পুরুষ জাতির ধর্ম নষ্টকারী স্ত্রী জাতির ফিতনা অপেক্ষা বড় কোনো ফিতনা দেখছি না। এর মর্ম হলো, স্ত্রী জাতির কারণে পুরুষের মনে যে কুচিন্তা ও কুবাসনার সৃষ্টি হয় তা তাকে কুপথে চালিত করতে সর্বাধিক শক্তিশালী। সুতরাং পুরুষ তার মনের এ মারাত্মক অবস্থার দ্বারা যত বেশি পাপ পথে যায় অন্য কিছুই তাকে তত পাপলিপ্ত করতে পারে না । তাদের মনে যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়, তার তুল্য ভীষণ অবস্থা কখনো কিছুর দ্বারাই ঘটে না। মনের এ অবস্থার একমাত্র প্রতিষেধক হলো বিবাহ। যে যুবকের গৃহে সুন্দরী যুবতী স্ত্রী বিদ্যমান তার মনে এ ধরনের কুচিন্তা বা চাঞ্চল্য সৃষ্টির কোনোই কারণ নেই। এ কারণেই বিবাহের এত বেশি ফজিলত।

বিবাহ ও দাম্পত্য জীবন

 
بابها النَّاسُ اتَّقوا رَبَّكُمُ الَّذِى خَلَقَكم من نفس واحدة وخلق مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاء. উচ্চারণ ঃ ইয়া আইয়্যুহান নাসুত্ তাকৃ রব্বাকুমুল লাযী খালাকাকুম মিন নাফসিওঁ ওয়াহিদাতিওঁ ওয়া খালাক্কা মিনহা যাওজাহা ওয়া বাছা মিনহুমা
রোজালান কাছীরাওঁ ওয়া নিসা-আ।
অর্থঃ হে মানব সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্ তা'আলাকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে একটি মাত্র আত্মা (অর্থাৎ হযরত আদম (আ.) হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তার জোড়া স্ত্রীকে পয়দা করেছেন আর তাদের মাধ্যমে অসংখ্য মানব সৃষ্টি করে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন— وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُمْ مِنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَجَعَلَ لَكُمْ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ بَنِينَ
وحفَدَةً وَرَزَقَكُمْ مِنَ الطيبتِ .
উচ্চারণ : ওয়াল্লাহু জা'আলা লাকুম মিন আনফুসিকুম আযওয়াযাওঁ ওয়া
জা'আলা লাকুম্ মিন আযওয়া-যিকুম বানীনা ওয়া হাফাদাতাওঁ ওয়া রাযাক্বাকুম
মিনাত্বত্বাইয়্যিবাত ।
অর্থ ঃ এবং আল্লাহ তা'আলা সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্যে হতে বিবিগণকে, আরও সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য তোমাদের বিবিগণ হতে তোমাদের পুত্র, পৌত্রগণকে আর তোমাদেরকে খেতে দিয়েছেন উত্তম খাদ্য। আরও এক আয়াতে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন।
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ .
উচ্চারণ ঃ ওয়ামিন আয়াতিহী আন খালাকা লাকুম মিন আনফুসিকুম আযওয়াজাল লিতাসকু ইলাইহা ওয়া জা'আলা বাইনাকুম্ মুওয়াদ্দাতাওঁ ওয়া রাহমাতান ইন্না ফী যালিকা লাআয়াতিল লিক্বাওমিই ইয়াতাফাক্কারূন ।
অর্থ ঃ আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।
এরূপ বহু আয়াত আল্লাহ তা'আলা কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন, যদ্বারা বিবাহের গুরুত ও ফজিলত সুস্পষ্ট হয়েছে।

Shaharuk Islam

Hi I am Shaharuk Islam. I enjoyed in writing articles and spread knowledge cross over the internet.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

Ad

Magspot Blogger Template

Ad

amazon.in
amazon.in

نموذج الاتصال