● সঞ্জয়ী পুকুরে চারাপোনা (Fingerlings) ছাড়বার আদর্শ অনুপাত : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে সঞ্চয়ী পুকুর তৈরি ও যথাযথ পরিচর্যার পর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল—নির্দিষ্ট আয়তনের পুকুরে কত সংখ্যক কার্প জাতীয় মাছের চারাপোনা ছাড়া হবে। বিভিন্ন প্রজাতির কার্পের সুনির্দিষ্ট লক্ষণ দেখে পৃথক করা হয় এবং নির্ধারিত অনুপাতে তাদেরকে সঞ্চয়ী পুকুরে ছাড়া হয়।
1. দেশজ মেজর কার্পের মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে পুকুরে হেক্টর প্রতি কাতলা, রুই ও মৃগেল যথাক্রমে 4:3:3 অনুপাতে ছাড়া উচিত। অর্থাৎ পুকুরে হেক্টর প্রতি 10,000 সংখ্যক চারাপোনা ছাড়ার ক্ষেত্রে কাতলা 4,000, রুই 3,000 এবং মৃগেল 3,000 মজুত করলে ফলন ভালো হয়।
2. বিদেশাগত মেজর কার্পের মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে পুকুরে সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প এবং সাইপ্রিনাস কার্পের চারাপোনা যথাক্রমে 3:1:2 অনুপাতে হেক্টর প্রতি 10,000 চারাপোনা মজুত করা হলে ফলন সন্তোষজনক হয়।
3. নিবিড় মিশ্র মাছ চাষের ক্ষেত্রে তিন প্রজাতির ভারতীয় মেজর কার্প (কাতলা, রুই ও মৃগেল) এবং তিন প্রজাতির বিদেশাগত মেজর কার্প (সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প ও সাইপ্রিনাস কার্প) একত্রে ছয় প্রজাতির মিশ্র চাষ করলে সর্বাধিক বেশি পরিমাণ ফলন পাওয়া যায়। লক্ষ করা গেছে যে নিবিড় মিশ্র চাষে কাতলা 1 : সিলভার কার্প 2.5: রুই 2.5 : গ্রাস কার্প 1: মৃগেল 1: সাইপ্রিনাস কার্প 2 অনুপাতে হেক্টর প্রতি 10,000 চারাপোনা মজুত করা হলে বছরে হেক্টর প্রতি 10,000 কেজি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।
সবিশেষ উল্লেখ্য, নদী থেকে এবং বাঁধ প্রজনন ক্ষেত্র থেকে সংগৃহীত ডিমপোনা ও ধানিপোনার মধ্যে অবাঞ্ছিত মাছের ডিমপোনা ও ধানিপোনা চলে আসে। এমনকি মাংসাশী মাছের (খাদক মাছের) ডিমপোনা বা ধানিপোনা থাকার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে মেজর কার্পের চাষ সর্বনাশের কারণ হয়। তাছাড়া ডিমপোনা সংগ্রহের উৎস থেকে চাষযোগ্য স্থানে পরিবহনকালে একদিকে যেমন প্রচুর ডিমপোনা মরে যায়, অপরদিকে এটি বেশ ব্যয়বহুল। এই সকল সমস্যা দূর করা সম্ভবপর হয়েছে পরবর্তীকালে আবিস্কৃত প্রণোদিত প্রজননের (In duced breeding) মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট প্রজাতির ডিমপোনা আহরণের দ্বারা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, দেশে ও বিদেশে বহু বিজ্ঞানী প্রণোদিত প্রজননের মাধ্যমে কার্প জাতীয় মাছের প্রজননের নিরলস প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। কিন্তু এই কাজে সর্বপ্রথম সাফল্য অর্জন করেন ভারতীয় বিজ্ঞানী ডা. হীরালাল চৌধুরী। এই বিরল কৃতিত্বের জন্য ভারত সরকার তাঁর জন্মদিন 10th July জাতীয় মৎস্যচাষী দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।