circulation of blood in human body

 সংবহন ও রক্ত
[CIRCULATION AND BLOOD]




সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষের সময় পরিবেশ থেকে যে জল শোষণ করে, তা জাইলেম কলার মাধ্যমে পাতায় এসে পৌঁছয়। পাতায় তৈরি খাবার ফ্লোয়েম কলার মাধ্যমে উদ্ভিদের বিভিন্ন সঞ্চয়ী অঙ্গের কলা-কোষে আসে। শ্বসনের সময় সজীব কোষে সঞ্চিত খাবার অক্সিজেনের প্রভাবে জারিত হয়ে শক্তির মুক্তি ঘটায়, যা বিভিন্ন বিপাকীয় কাজে লাগে। উন্নত প্রাণীদেহে রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে বিভিন্ন কলাকোষে অক্সিজেন এবং পুষ্টিদ্রব্যের (যেমন: পাচিত খাদ্য-রস, উৎসেচক, ভিটামিন, খনিজ লবণ ইত্যাদির) সরবরাহ ঘটে, আবার ক্লাকোষে বিপাকক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং বর্জ্য বা রেচন-বস্তুসমূহ নির্দিষ্ট অঙ্গে আসে। জীবদেহের একস্থান থেকে অন্যস্থানে জল, রক্ত, লসিকা ইত্যাদি তরল মাধ্যমে ওই সমস্ত জৈব ও অজৈব বস্তুর আদান-প্রদান বা চলাচলের জৈবিক প্রক্রিয়াকে সংবহন বলে।




 সংবহন ও তার প্রয়োজনীয়তা (Circulation and its utility) :


■ সংবহনের সংজ্ঞা : যে বিশেষ পদ্ধতিতে জীবদেহের প্রতিটি সজীব কোষে খাদ্যের সারাংশ, পুষ্টিদ্রব্য, অক্সিজেন, হরমোন ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট পথে পৌঁছয় এবং কোষ থেকে বিপাকজাত দূষিত পদার্থ অপসারিত হয়ে নির্দিষ্ট অঙ্গে প্রেরিত হয়, তাকে সংবহন বা সারকুলেশন বলে। 


■ সংবহনের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা : সংবহনের মাধ্যমে জীবদেহে যে সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ সাধিত হয় সেগুলি হল--














  •  ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য সঞ্চয়: সংবহনের মাধ্যমে দেহের প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্যবস্তু বিভিন্ন সঞ্চয়ী অঙ্গে এসে পৌঁছয় এবং ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চিত থাকে।

  •  শ্বাসবায়ু পরিবহন: সংবহনের মাধ্যমে শ্বাস অঙ্গ থেকে অক্সিজেন প্রতিটি সজীব কোষে সরবরাহ হয় এবং কোষে উৎপন্ন কার্বন ডাই-অক্সাইড কোষ থেকে দূরীভূত হয়ে শ্বাস অঙ্গে আসে।

  •  রেচন ক্রিয়া : সংবহনের মাধ্যমেই বিপাকের ফলে উৎপন্ন বিভিন্ন রেচন বস্তুগুলি কোষ
  • থেকে দূরীভূত হয়ে রেচন অঙ্গে এসে পৌঁছয়।

  • . হরমোন পরিবহন: প্রাণিদেহের বিভিন্ন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে হরমোন সমূহ সংবহনের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন কলা-কোষে ছড়িয়ে পড়ে। 

  •  দেহে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ : উষ্ণ-শোণিত প্রাণীর ক্ষেত্রে সংবহনের মাধ্যমে দেহের
  • তাপমাত্রা বজায় থাকে।

  •   জলসাম্য নিয়ন্ত্রণ : জীবদেহে জলসাম্য নিয়ন্ত্রণে সংবহনের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

  •  দেহের সুরক্ষা : উন্নত প্রাণীদেহে রক্তমাধ্যমে শ্বেত-রক্তকণিকা ও ‘অ্যান্টিবডি’ বহনের মাধ্যমে রোগজীবাণু প্রতিরোধ করে দেহের অনাক্রম্যতা বজায় রাখা সংবহনের অন্যতম লক্ষ্য।

  পরিবহনের মাধ্যম (Medium of transport) :
বহুকোষী জীবদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বস্তুসমূহের কোষ থেকে কোষান্তরে সঞ্চালনের জন্য বিশেষ মাধ্যমের প্রয়োজন। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে পরিবহনের মাধ্যম হল জল এবং উন্নত প্রাণীদের ক্ষেত্রে পরিবহনের মাধ্যম হল রক্ত এবং লসিকা। নিম্নশ্রেণীর প্রাণী, যেমন : স্পঞ্জ, হাইড্রা, তারামাছ প্রভৃতির পরিবহন তথা সংবহনের মাধ্যম হল জল।
 পরিবাহিত উপাদান সমূহ (Elements to be transported) :
জীবদেহে সংবহনের মাধ্যমে যে সব উপাদানসমূহ পরিবাহিত হয়, সেগুলি হল : খাদ্যবস্তু, ভিটামিন, খনিজবস্তু, অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, হরমোন এবং বিপাকজাত দূষিত পদার্থসমুহ।


 পরিবহনের পথ (Path of Transport) :

উদ্ভিদের ক্ষেত্রে জাইলেম ও ফ্লোয়েম এবং প্রাণীর ক্ষেত্রে ধমনী, শিরা, রক্তজালক ও লসিকাবাহ হল পরিবহনের পথ।  

উদ্ভিদের পরিবহনের উপায়সমূহ (Ways of transport in plant) : 

ব্যাপন, অভিস্রবণ, শোষণ, বাষ্পমোচন ইত্যাদি ভৌত ও শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলি উদ্ভিদের
সংবহনে বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে। জলজ উদ্ভিদ সারাদেহ দিয়েই ব্যাপন প্রক্রিয়ায় জল ও জলে দ্রবীভূত খনিজ লবণ শোষণ করে। স্থলজ উদ্ভিদরা অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় মূলরোম দিয়ে জল শোষণ করে এবং ব্যাপন প্রক্রিয়ায় খনিজ লবণ শোষণ করে। জল ও জলে দ্রবীভূত খনিজ লবণ কোষান্তর ব্যাপন ও অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের জাইলেম বাহিকায় পৌঁছয় এবং জাইলেম দিয়ে পাতার মেসোফিল কলায় পৌঁছয়। পাতার পত্ররন্ধ্র দিয়ে বাষ্পমোচন হওয়ার ফলে যে প্রস্বেদন টান সৃষ্টি হয় তার ফলে জল ও জলে দ্রবীভূত খনিজ লবণ ঊর্ধ্বমুখে বাহিত হয়। পাতায় উৎপন্ন খাদ্যরস ফ্লোয়েম কলার মাধ্যমে নিম্নাভিমুখে বাহিত হয়। ফ্লোয়েম কলা থেকে খাদ্যরস ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভিদ দেহের কলা-কোষে ছড়িয়ে পড়ে।

জাইলেমের মাধ্যমে রসের উৎস্রোত (Ascent of sap through Xylem) :

উদ্ভিদের মূলরোম দ্বারা শোষিত জল এবং জলে দ্রবীভূত খনিজ লবণ, এককথায় রস বা স্যাপ (sap) জাইলেম বাহিকার মাধ্যমে অভিকর্ষের বিপরীতে ঊর্ধ্বমুখে বাহিত হয়ে পাতায় পৌঁছয়। জাইলেম বাহিকাগুলি মূল থেকে পাতা পর্যন্ত একটি অবিচ্ছিন্ন অঙ্গ গঠন করে। ওই রকম অবিচ্ছিন্ন অঙ্গের মাধ্যমে রস (জলীয় দ্রবণ) মূলজ চাপ, শোষণ চাপ, বায়বীয় চাপ ইত্যাদি ভৌত প্রক্রিয়ায় এবং জল ও জলীয় দ্রবণের অণুগুলির সমসংযোগ ও অসমসংযোগের ফলে এবং প্রস্বেদন টানের বশবর্তী হয়ে ঊর্ধ্বমুখে বাহিত হতে থাকে অর্থাৎ রসের উৎস্রোত ঘটে।

ফ্লোয়েমের মাধ্যমে পরিবহন (Translocation through phloem) :

উদ্ভিদের পাতায় উৎপন্ন তরল খাদ্যবস্তু ফ্লোয়েম কলার মাধ্যমে নিম্নাভিমুখে সংবাহিত হয়। ফ্লোয়েম কলার অন্তর্গত সিভ নলগুলি পরস্পর খাড়াভাবে অবস্থান করে একটি অবিচ্ছিন্ন অঙ্গ গঠন করে। সিভ নলের দুটি কোষের অন্তর্বর্তী অনুপ্রস্থ প্রাচীর চালুনির মত ছিদ্রবহুল হওয়ায় ওই ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে তরল খাদ্যবস্তু সহজেই বাহিত হতে পারে। সিভ নল থেকে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় খাদ্যরস উদ্ভিদদেহের বিভিন্ন অঙ্গে পরিবাহিত হয়।

 সংবহন তন্ত্র কাকে বলে? (What is circulatory system?) :

যে তন্ত্র দেহের বিভিন্ন অঙ্গে বা কলা-কোষে খাদ্যের সারাংশ, হরমোন, অক্সিজেন ইত্যাদি সরবরাহ করতে এবং কলা-কোষে উৎপন্ন বিপাকজাত দূষিত পদার্থ সমূহকে কোষ থেকে দূরীভূত করে নির্দিষ্ট অঙ্গে প্রেরণ করতে সাহায্য করে, তাকে সংবহন তন্ত্র বলে। 
উন্নত প্রাণীদেহে রক্তসংবহন তন্ত্র এবং লসিকা সংবহন তন্ত্র থাকে।

 মুক্ত ও বদ্ধ সংবহন (Open and closed type of circulation) :

প্রাণীদেহে সাধারণত দু'ধরনের রক্ত সংবহন পদ্ধতি দেখা যায়, যথা : (i) মুক্ত সংবহন ও (ii) বদ্ধ সংবহন।
■ মুক্ত সংবহন : যে সংবহনে সংবাহিত তরল (রক্ত) সুনির্দিষ্ট পথে (রক্তবাহে) আবদ্ধভাবে সংবাহিত না হয়ে দেহ গহ্বরে মুক্ত হয়, সেই সংবহনকে মুক্ত সংবহন বলে। চিংড়ি, পতঙ্গ, শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি প্রাণীদেহে মুক্ত সংবহন দেখা যায়।
■ বদ্ধ সংবহন : যে সংবহনে সংবাহিত তরল সুনির্দিষ্ট পথে (অর্থাৎ হৃদপিণ্ড ও রক্তবাহে) আবদ্ধভাবে সংবাহিত হয়, কখনও দেহ গহ্বরে মুক্ত হয় না, সেই সংবহনকে বদ্ধ সংবহন বলে।
কেঁচো, জোঁক, ইত্যাদির মতো কিছু অমেরুদণ্ডী প্রাণী এবং মানুষসহ সমস্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের বদ্ধ সংবহন দেখা যায়।


সংবাহিত তরল (Circulating fluid) : 

 প্রাণী দেহে সংবাহিত তরল হল রক্ত এবং লসিকা। রক্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের সংবহনের প্রধান মাধ্যম। রক্ত এক বিশেষ ধরণের তরল যোগকলা। রক্তের মাধ্যমেই বিভিন্ন সংবাহিত উপাদানগুলি দেহের বিভিন্ন অংশে (কলা-কোষে) সরবরাহ হয় আবার কলাকোষ থেকে বিভিন্ন দূষিত বস্তু সমূহ রক্তের মাধ্যমেই নির্দিষ্ট অঙ্গে প্রেরিত হয়। রক্তজালক ও কলাকোষের মধ্যে লসিকার মাধ্যমে সংবাহিত বস্তুর আদান-প্রদান ঘটে।

[ Circulation and its utility: Medium of transport. Elements to be transported. Mechanism of circulation. 
 Plants – Ways of Transport osmosis, diffusion, absorption of water and
solutes: Ascent of Sap through Xylems, Translocation through phloem. (b) Animals – What is circulatory system ? Open and closed type of circulation. Circulating fluid. Blood-fluid tissue (connective tissue). Components of blood. Respiratory pigments. Functions of blood-Blood group in elementary way. Components of circulatory system-Heart. Artery, Vein, Capillary. Mention rhythmicity of heart and valves as regulatory structures. Diagramatic representation of human heart and blood circulation through it.]

Shaharuk Islam

Hi I am Shaharuk Islam. I enjoyed in writing articles and spread knowledge cross over the internet.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

Ad

Magspot Blogger Template

Ad

amazon.in
amazon.in

نموذج الاتصال