![]() |
জুম্মা নামাজ |
ইমাম আহমদ (র.) থেকে বর্ণিত । তিনি বলন, জুমার রাত্রের মর্যাদা শবে- কদরের চেয়েও বেশি। এর বহুবিধ কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম কারণ এই যে, এ রাত্রে সরওয়ারে আলম (সা.) তাঁর মাতৃগর্ভে শুভাগমন করেছিলেন। হযরতের শুভাগমনের মধ্যেই দুনিয়া ও আখিরাতের অগণিত ও অশেষ মঙ্গল নিহিত । -(আশি আতুল লুম'আত শরহে মিশকাত ফারসি)
৩. নবী (সা.) বলেন, জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, তখন কোনো মুসলমান যদি আল্লাহ তা'আলার নিকট দোয়া করে আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তা কবুল করেন। -(বুখারী ও মুসলিম)
হাদীসের ভাষ্যকার আলিমগণ হাদীসে উল্লিখিত মুহূর্তটি নির্দিষ্ট করতে গিয়ে বিভিন্ন মতামত পোষণ করেছেন। শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী শরহে সিফস সা'আদত গ্রন্থে ৪০টি অভিমত উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে দু'টি অভিমতকে তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন। একটি এই যে, সে সময়টি খুতবা পড়ার সময় থেকে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়ের মধ্যে রয়েছে। দ্বিতীয়টি এই যে, সে সময়টি দিনের শেষ ভাগে রয়েছে। এই দ্বিতীয় অভিমতটি আলিমদের একটি বড় মূল গ্রহণ করেছেন। অনেক সহীহ হাদীসও এর সমর্থনে রয়েছে। শায়খ দেহলবী (র.) বলেন, এ রেওয়ায়তটি সহীহ যে, হযরত ফাতিমা (রা.) জুমার দিন তাঁর কোনো খাদিমাকে জুমার দিন শেষ হওয়ার সময় তাকে অবহিত করতে বলে দিতেন, যাতে তিনি জিকির ও দোয়ায় মশগুল হতে পারেন।
মহানবী (সা.) বলেন, তোমাদের সকল দিনের মধ্যে জুমার দিনই সর্বোৎকৃষ্ট। এ দিন (কিয়ামতের জন্য) শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে। এ দিন তোমরা আমার প্রতি বেশি দরুদ শরীফ পড়বে। কেননা এ দিনে আমার সামনে তা পেশ করা হয়। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.) আপনার সামনে তা কিভাবে পেশ করা হবে অথচ মৃত্যুর পর তো আপনার হাড়ও থাকবে না। হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহ তা'আলা পরকালের জন্য নবীদের শরীর হজম করা জমিনের ওপর হারাম করে দিয়েছেন। -(আবূ দাউদ শরীফ)
মহানবী (সা.) বলেন, (পবিত্র কুরআনে) 'শাহেদ' শব্দ দ্বারা জুমার দিন উদ্দেশ্য। জুমার দিনের চেয়ে উৎকৃষ্ট কোনো দিন নেই। এদিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, তখন মু'মিন বান্দা যে দোয়াই করে আল্লাহ তা'আলা তা কবুল করেন এবং যে বিষয় থেকেই পানাহ চায় আল্লাহ তা'আলা তাকে তা থেকে পানাহ দেন।
-(তিরমিযী শরীফ) 'শাহেদ' শব্দটি সূরা বুরূজে ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা এদিনের কসম করেছেন। বলা হয়েছে –
অর্থাৎ কসম গ্রহ-নক্ষত্র বিশিষ্ট আসমানের, কসম প্রতিশ্রুত দিবসের
(অর্থাৎ কিয়ামতের) এবং শাহেদ (জুমার দিন) ও মাশহুদ (আরাফার দিন)-এর ।
মহানবী (সা.) বলেছেন- জুমার দিন সকল দিনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহ তা'আলার নিকট সবচেয়ে বেশি মর্যাদাশীল। আল্লাহ তা'আলার নিকট ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আজহার চেয়ে জুমার দিনের মর্যাদা বেশি।
মহানবী (সা.) বলেন, যে মুসলমান জুমার দিন বা জুমার রাত্রে মৃত্যুবরণ করে আল্লাহ তা'আলা তাকে কবর আজাব থেকে হেফাজত করেন।
মহানবী (সা.) বলতেন, জুমার রাত আলোকোজ্জ্বল রাত এবং জুমার দিন আলোকোজ্জ্বল দিন। -(মেশকাত শরীফ)
কিয়ামতের দিন হিসাব-নিকাশের পর আল্লাহ তা'আলা যখন জান্নাতের উপযোগীদেরকে জান্নাতে এবং জাহান্নামের উপযোগীদেরকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেবেন এবং এ দিন সেখানেও থাকবে ; যদিও সেখানে দিন রাত থাকবে না, কিন্তু আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে দিন রাতের পরিমাণ এবং ঘণ্টার হিসাব শিক্ষা দেবেন। অতএব যখন জুমার দিন আসবে এবং সে সময় আসবে যখন মুসলমানরা দুনিয়াতে জুমার নামাজের জন্য বের হতো তখন জান্নাতের একজন ফেরেশতা উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করবেন যে, হে জান্নাতবাসীগণ! তোমরা অতিরিক্ত পুরস্কারের ময়দানে চলো । সে ময়দান এত বিশাল হবে যার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত কেউ জানে না। সেখানে আসমানের সমান উঁচু মেশকের বড় বড় স্তূপ থাকবে। নবীগণকে নূরের মিম্বারের ওপর এবং মু'মিনদেরকে ইয়াকৃতের কুরসীতে বসতে দেওয়া হবে। অতঃপর যখন সবাই নিজ নিজ স্থানে আসন গ্রহণ করবে তখন আল্লাহ তা'আলা এক প্রকার বাতাস প্রবাহিত করবেন এবং সে বাতাসে সেখানকার মেশক উড়বে। বাতাস সে মেশককে তাদের কাপড়ে, মুখে ও চুলে লাগিয়ে দেবে। সে বাতাস মেশক লাগানোর নিয়ম এরূপ নারী থেকে অধিক জানে, যাকে সমগ্র বিশ্বের খোশবু দেওয়া হয় (এবং সে তার ব্যবহার জানে)। তখন আল্লাহ তা'আলা আরশ বহনকারী ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দেবেন যে, আমার আরশ এ সব লোকের মাঝখানে নিয়ে রাখো। তারপর স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা সেসব লোকদেরকে সম্বোধন করে বলবেন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা দুনিয়াতে আমাকে না দেখে আমার প্রতি ঈমান এনেছিলে, আমার রাসূল (সা.)-কে বিশ্বাস করেছিলে এবং আমার হুকুম মেনেছিলে । আজ তোমরা আমার নিকট কিছু চাও; আজ অতিরিক্ত পুরস্কার দানের দিন। তখন সবাই সমস্বরে বলবে, হে আমাদের পরওয়ারদেগার! আমরা আপনার প্রতি সন্তুষ্ট, আপনিও আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ তা'আলা বলবেন, হে জান্নাতবাসীগণ! আমি যদি তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট না হতাম তবে তোমাদেরকে আমার জান্নাতে স্থান দিতাম না। আজ অতিরিক্ত পুরস্কারের দানের দিন, সুতরাং তোমরা আরো কিছু চাও। তখন সবাই একবাক্যে বলবে, হে আমাদের পরওয়ারদেগার! আমাদেরকে আপনার সৌন্দর্য দেখিয়ে দিন, যাতে আমরা স্বচক্ষে আপনার পবিত্র সত্তা অবলোকন করতে পারি। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তাঁর পর্দা উন্মোচন করে দেবেন এবং তাদের • সামনে আত্মপ্রকাশ করবেন, আর তাদেরকে তাঁর জগৎ ভাসানিয়া আলোর ফোয়ারায় পরিবেষ্টন করে নেবেন। জান্নাতবাসীগণ কখনো বিদগ্ধ হবে না— এ নির্দেশ যদি তাদের সম্পর্কে পূর্ব থেকে না থাকতো তবে তারা এ নূর কিছুতেই সহ্য করতে পারতো না ; বরং ভস্মীভূত হয়ে যেতো। অতঃপর তাদেরকে বলবেন, তোমরা নিজ নিজ স্থানে চলে যাও। তাদের দৈহিক সৌন্দর্য সেই নূরে রব্বানীর কারণে দ্বিগুণ বেড়ে যাবে । তারা তাদের স্ত্রীদের নিকট যাবে, কিন্তু তাদের স্ত্রীরা তাদেরকে দেখতে পাবে না এবং তারাও তাদের স্ত্রীদেরকে দেখতে পাবে না। কিছুক্ষণ পর যখন সেই পরিবেষ্টনকারী নূর সরে যাবে তখন তারা একে অপরকে দেখতে পাবে। তাদের স্ত্রীরা বলবে, যাওয়ার সময় তোমাদের যে আকৃতি ছিল, তা এখন আর নেই, অর্থাৎ তার চেয়ে হাজারো গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা উত্তরে বলবে, হাঁ, এটা এ কারণে হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা তাঁর পবিত্র সত্তাকে আমাদের সামনে প্রকাশ করেছিলেন এবং আমরা স্বচক্ষে সেই সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করেছি। (শরহে সিফরুস সা'আদাত) দেখুন তারা জুমার দিন কত বড় নিয়ামত লাভ করল।
প্রত্যহ দ্বিপ্রহরের সময় জাহান্নামের আগুনের তেজ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়, কিন্তু জুমার দিন জুমার বরকতে তার তেজ বৃদ্ধি করা হয় না । -(ইহয়াউল উলূম)
মহানবী (সা.) এক জুমার দিন বললেন, হে মুসলমানগণ! এ দিনকে আল্লাহ তা'আলা তোমাদের জন্য ঈদের দিন স্বরূপ ধার্য করেছেন। সুতরাং এ দিন তোমরা গোসল করবে, যার কাছে সুগন্ধি থাকে সে সুগন্ধি লাগাবে এবং এদিন অবশ্যই মিসওয়াক করবে। (ইবনে মাজাহ)
জুমার নামাজ ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী মুকীম হওয়া । অতএব মুসাফিরের ওপর জুমুআ ফরজ নয়।