স্বাদু জলে গলদা চাষ (Fresh water Prawn Culture)
কবচ ও খোলস যুক্ত জলজ প্রাণীর মধ্যে গলদা চিংড়ি অন্যতম। গলদা চিংড়ি স্বাদু বা মিঠে জলে বাস করে, কিন্তু এর ডিম ও বাচ্চা হয় মোহনার জলে (Estuary) এদের সকলেই চাষযোগ্য। তার মধ্যে গলদা বা জায়েন্ট (Giant) বা ফ্রেস ওয়াটার প্রণই চাষের পক্ষে সবচেয়ে ভাল। এর বৈজ্ঞানিক নাম- Macrobrachium rosenbergii। গলদা চিংড়ি বা (Scampy) খুব বড় আকারের হয়, বাজারে দামও বেশি এবং লাভের পরিমাণও বেশি হয়।
![]() |
গলদা |
সব রকম জলাশয়ই চিংড়ি চাষের উপযুক্ত, তবে বালিময় পলি মাটির তলদেশ পাকহীন ও সমতল হলেই সবচেয়ে ভাল। জলাশয়ের গভীরতা হবে ২.৫-৩ ফুট যুক্ত, আলো বাতাস খোলামেলা দূষণহীন ও চিংড়িখেকো মাছ মুক্ত হওয়া দরকার। গলদা চিংড়ি চাষের পুকুরে নদী, খাল ইত্যাদির বহতা জল প্রবেশের ব্যবস্থা হওয়া দরকার।.
গলদা চিংড়ি চাষের জলাশয় তলদেশ রোদে শুকিয়ে নিয়ে চাষযোগ্য করলে ফলন ভাল হবে। চাষযোগ্য করার সময় প্রযুক্তি মত চুন, খোল, সার (জৈব ও অজৈব) যেমন দেবার দিতে হবে। জলের গুণাগুণ পোনা মাছ চাষের মতই হবে। তবে দ্রবীভূত অক্সিজেন বেশি রাখার জন্য বায়ু সঞ্চালক যন্ত্র (aerator) চালালে ফলন অনেক বেশি হবে।
![]() |
বায়ু সঞ্চালক যন্ত্র (aerator) |
গলদা চিংড়ি চাষের উপকূল পরিবেশ
শুধুমাত্র গলদা চিংড়ি চাষে ৪৫ সেন্টিমিটার মাপের ৭৫-১০০টি ও বায়ু সঞ্চালক যন্ত্র (acrator) ব্যবহার করলে ১০০-১২৫টি প্রতি শতক জলে ছাড়া যাবে। চিংড়ি জন্মাবার পর খোলস বদল করে বড় হয়। জন্মাবার ৩০-৪৫ দিনের মধ্যে ১০–১১ বার খোলস ছেড়ে (Moulting/Eedysis) ৮-১০ মিলিমিটার পরিণত হয় (Post Larval Stage), ৩ মাস পর থেকে ৫ – ৭ দিন অন্তর, ৪ – ৫ মাস পর থেকে মাসে একবার করে খোলস ছাড়ে। খোলস বদলের পর চিংড়ির দেহ নরম হয়ে যায়, তখন সহজেই অন্য চিংড়ি বা জলজ প্রাণীর দ্বারা নষ্ট হবার ভয় থাকে। তখন তার আত্মরক্ষার জন্য জলাশয় তাল, খেজুর পাতা অথবা পোড়ামাটির বা সিমেন্টের নল (২ ফুট লম্বা ও ৩ ইঞ্চি ব্যাস) অথবা মোটর গাড়ির পুরনো রবারের চাকা (Tyre) কয়েকটি ফেলে রাখা দরকার।
সমুদ্র ও তার উপকূলবর্তী জলাশয়
সমুদ্র ঘাস (সি উইড), মুক্তো (অয়েস্টার), কাঁকড়া, বাগদা ও অন্যান্য নোনা জলের চিংড়ি, নোনা জলের মাছ (পারশে, ভাঙন, মিল্কফিস, ভেটকি ইত্যাদি) অগভীর সমুদ্রে নোনা জলের ভেড়িতে ও জোয়ারের জল নিয়ে মাছ চাষের পুকুরে
মাছ ও চিংড়ি চাষ
পুকুর : সাধারণতঃ পুকুর বিভিন্ন মাপের হলেও ছোট-বড় সব মাপের পুকুরেই মাছ চাষ করা সম্ভব। স্বাদু জলের পুকুরে কার্পজাতীয় মাছ, শিঙি, মাগুর, কই, শোল, গলদা চিংড়ি ইত্যাদি চাষ করা যায়। নোনা জলের পুকুরে পারশে, ভেটকি, ভাঙন, বাগদা চিংড়ি ইত্যাদির চাষ করা যায়। ডোবা সংস্কার করে পরিস্থিতি অনুযায়ী জিওল মাছ, গলদা চিংড়ি এমনকি কার্পজাতীয় মাছও চাষ করা যায়।
নিচু জলা বা ধান ক্ষেত : নিচু জলা বা ধান ক্ষেতে বিভিন্ন প্রকার মাছ চাষ করা যায়। বর্ষাকালে দেশীয় ছোট প্রজাতির মাছের এটা হল আদর্শ প্রজনন ক্ষেত্র। ধান ক্ষেতে গ্রাসকার্প বাদ দিয়ে কার্পজাতীয় মাছ, মাগুর ও শিঙি, গলদা চিংড়ি, বাগদা চিংড়ি (নোনা জলের ধানের সঙ্গে) চাষ করা যায়।
কৃত্রিম বা অতিকৃত্রিম জলাধার ঃ ব্যবহার্য জলের প্রকৃতি, পরিকাঠামোর মান, অর্থ বিনিয়োগ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে উপযোগী চাষযোগ্য মাছের চাষ করা যায়। তবে, কৃত্রিম বা অতিকৃত্রিম জলাধারে মাছ চাষ সম্পূর্ণ কৃত্রিম খাদ্য নির্ভর হয়। সাধারণতঃ দেশী ও বিদেশী কার্পজাতীয় মাছ, জিওল মাছ, গলদা ও বাগদা চিংড়ি চাষ করা যায়। তবে এই জলাধারগুলো মাছের ও চিংড়ির লার্ভা প্রতিপালনের জন্য ব্যবহার করা যায়। এছাড়া বেশিরভাগ রঙিন মাছ চাষ করা যায়।
সুসংহত মাছ চাষ : কোন জলসম্পদের ও তার পারিপার্শ্বিক জায়গার সদ্ব্যবহারের জন্য মাছের সঙ্গে অন্যান্য প্রাণী বা পশুপালন, কৃষি ফসল চাষ, বাগিচা ফসল চাষ করা যায়। এতে প্রতি একক জায়গা থেকে উৎপাদন ও আয় দুইই বেশি হয়। যেমন—হাঁসের সঙ্গে মাছ চাষ, মুরগির সঙ্গে মাছ চাষ, শুকরের সঙ্গে মাছ চাষ, গরু, ছাগল বা ভেড়ার সঙ্গে মাছ চাষ, কৃষি ফসলের সঙ্গে মাছ চাষ, বাগিচা ফসলের সঙ্গে মাছ চাষ ইত্যাদি।
গলদা চিংড়ি চাষে প্রয়জনীয় খাদ্য
গলদা চিংড়ি সর্বভূক—উদ্ভিদ জাতীয় শেওলা (যা জলে নিমজ্জিত চোঙ তাল, খেজুর পাতা, ইট, কাঠ, পাথরের উপর জন্মানো (Periphyton), পচাগলা গুল্ম, প্রাণীদেহ, ঝিনুক, গুগলি, শামুকের মাংস খেয়ে থাকে, বাজারের দানা খাবারও গ্রহণ করে। চিংড়ি মজুত করার পর ১ দিন অন্তর মোট মজুত চিংড়ির ওজনের ২০ শতাংশ তারপর ক্রমান্বয়ে ১০ শতাংশ, ৫ শতাংশ ও শেষ পর্যন্ত ৩ শতাংশ হারে খাবার দিতে হবে। খাবার দিনে ২ বার, সকালে খাবারের তিনভাগের ১ ভাগ ও সন্ধ্যার সময় বাকি ২ ভাগ দিতে হবে। চিংড়ি নিশাচর, রাতেই বেশি খাবার খাবে। খাবার বাঁশের ডালা, থালা বা ট্রে (Tray)-তে দেওয়া ভাল, কম নষ্ট হবে। যদি দেখা যায় খাবার তাড়াতাড়ি শেষ হচ্ছে, তবে খাবার বাড়াতে হবে। সমবয়সী চিংড়ি একই সময় খোলস বদল করে, তখন খাবার দেওয়া বন্ধ করতে হবে। সময়বসী পুরুষ চিংড়ি তাড়াতাড়ি বাড়ে, দাঁড়া খুব বড় হয়, এদের তুলে দিলে ফলন বাড়ে। বেশি ফলন পেতে হলে রাত ১২ টার পর বায়ু সঞ্চালক যন্ত্র ৩-৪ ঘণ্টা চালাতে হবে। কোনও কারণে জল গরম হলে বা ঘন সবুজ হলে (algal bloom) কিছু জল তুলে দিয়ে নদী, খাল বা নলকূপের পরিষ্কার জল ভরে পূরণ করতে হবে। দেশি ও বিদেশি কাপ পরিবারের মাছের সাথে মিশ্র চাষে চিংড়ি মজুতের হার কখনই শতকে ৫০টির বেশি হবে না এবং তলদেশ বা নীচের স্তরের (Bottom feeder) মাছ অর্থাৎ মৃগেল, সাইপ্রিনাস, পাঙ্গাস ও মাগুর ছাড়া যাবে না। চাষের পুকুরের কিছু অংশে আচ্ছাদন দেওয়া ভাল।
প্রয়োজনে আমাদের হ্যাচারিতে যোগাযোগ করতে পারেন,আমাদের হ্যাচারীতে পুকুরচাষের যাবতীয় ডিমপোনা ও চারাপোনা পাওয়া যায়।
পেটলা
থানা- দিনহাটা,
জেলা-কুচবিহার
ফোন- ৮৩৪৩৮৮৯৪২৪(মিটু)
৮৫১৪০২৯১৫৪(মিলু)
৭৫৫০৮৭২৪৮৪(শাহারুক)