মাছের বহিরাকৃতি (External Feature)
মাছের দেহের গঠন মাকুর মতো। সামনে মুখ ও শেষে লেজের দিক সরু, মাঝে চওড়া ও পাশে চাপা। এদের দেহ প্রধানত তিনভাগে বিভক্ত। যথা—
(ক) মস্তক বা মাথা (Head) (খ) দেহ বা ধড় (Body) ও (গ) লেজ (Tail)
(ক) মস্তক বা মাথা শরীরের সামনে সরু অংশ নাসাগ্র থেকে কানকোর শেষভাগ পর্যন্ত অংশ হলো মাথা। প্রথমে মুখাগ্র (Snout) বা চোয়ালের সামনে ঠোট দুটি পাতলা বা মোটা হয়—ওপর ও নীচের অংশে কিছু মাছের শুঁড় (Barbel) থাকে। চোয়ালে কিছু মাছের দাঁত থাকে, কিছুর থাকেনা। যাদের চোয়ালে দাঁত থাকে তারা মাংসাশী (Carnivore), যাদের থাকেনা তারা | শাকাহারী (Herbivore)। ঐ অংশের পিছনে দু'টি নাসারন্ধ্র (Nostrils) আছে। মাছের গন্ধ নেবার কাজ করে। শাকাহারী মাছের দাঁত খাদ্যনালির ঠিক উপরে গলবিল (Pharynx)-এ থাকে। এরা খাদ্যকণা ফুলকার ভিতরের অংশের চিরুনি দাঁতের (Filament/Raker) সাহায্যে ছেঁকে নিয়ে চিবিয়ে অন্ননালিতে পাঠায়। শুঁড় মাছকে জলতলের অন্ধকার অংশে খাবার খুঁজে নিতে সাহায্য করে। নাসারন্ধ্রের পিছনে মাছের একজোড়া চোখ আছে। চোখের মণি কোঠারাগত নয়। বাইরের দিকে বের করা। চোখে পাতা বা পর্দা নেই। উপপর্দা আছে। চোখের শেষে মাথার দুইপাশে দুটি শক্ত হাড়ের ফুলকার ঢাকা বা কানকো (Uper-culum) আছে। প্রতি কানকোর নীচে রক্তবর্ণের ৪টি করে ফুলকা থাকে যার সাহায্যে মাছ জলে মিশে থাকা অক্সিজেন (Dissolved oxygen) ব্যাপন ক্রিয়ার (Defusion) মাধ্যমে নিয়ে শ্বাসকার্য করে। কানকোর শেষ অংশে পাতলা নরম পর্দা/ঝিল্লি (Branchiostegal membrane) অঙ্গ থাকে। কানকো সংলগ্ন ঝিল্লিটি দেহ ও কানকোর মধ্যে কপাটিকা (valve)-র কাজ করে। ফলে মাছের মুখের ভেতর জল ঢোকানো ও বের করে দেবার সবিধা হয় এবং শ্বাসকার্য ঠিকমতো হয়।
(খ) দেহ বা ধড় মাছের মাথার শেষ ঘাড় ও লেজের গোড়ার মধ্যবর্তী অংশ হল দেহকাণ্ড। অনেক মাছের আঁশ (Scales) আছে। অনেকের নেই। আঁশের উপর পিচ্ছিল হড়হড়ে শ্লেষ্মা (Slime) থাকে। প্রজাতি অনুযায়ী আঁশ (Cycloid), খসখসে (Ctenoid) বা কাঁটার মত ( Gonoid) হয়। দেহের মাঝ বরাবর কানকোর গোড়া থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত দাগ দাগ (Dot dot) লম্বা পার্শ্বরেখা (Lateral line) একটি বা দু'টি আছে। এর নীচেই ত্বকের মধ্যে থাকে স্পর্শেন্দ্রিয়, যার দ্বারা মাছ জলের গভীরতা মাপতে পারে। আঁশহীন মাছের দেহ ত্বক মোটা হয়। দেহে রশ্মি বা শিরযুক্ত (Rays) অনেকগুলি পাখনা বা উপাঙ্গ আছে। কার্প (Carp) প্রজাতির পিঠে ও পায়ুর পাশে একটি করে পৃষ্ঠপাখনা (Dorsal fin) ও পায়ু পাখনা (Anal fin), কানকোর দু'পাশে দু'টি বক্ষপাখনা (Pectoral fins), তলপেটের নীচে দুটি শ্রোণীপাখনা (Pelvic fins) বর্তমান। কিছু মাছের পৃষ্ঠপাখনা দুটি। শেষেরটি অতিরিক্ত পাখনা (Adepose fin)। পাখনাগুলি মাছকে জলে চলাফেরা করতে সাহায্য করে। পায়ুপাখনার ঠিক আগে মাছের পায়ু বা মলদ্বার (Anus), রেচন জননেন্দ্রিয় (Urino genital organ) বর্তমান। প্রজননকালে কার্প জাতীয় প্রজননক্ষম স্ত্রীমাছের বক্ষপাখনার ভিতর দিক মসৃণ হয় ও জননদ্বার বাইরের দিকে বেরিয়ে আসে। সে তুলনায় পুরুষ মাছের বক্ষপাখনার ভিতর দিক খসখসে ও জননাঙ্গ ভিতরের দিকে ঢুকে থাকে।
![]() |
Fish |
(গ) লেজ শেষ অংশ লেজ। লেজ দ্বিধাবিভক্ত (Homo circle), কিন্তু প্রাজতি অনুসারে গোল (Circle), অর্ধ গোলাকার (Half circle), কাঁচির মতো (Bifurcated), কাঁটাচামচ (Forked), ডিম্বাকার (Oval), সরু ফিতা (Ribbon) ইত্যাদি আকারের হয়। লেজের শুরু থেকে মাথার দিকে পৃষ্ঠপাখনার শেষ, পার্শ্বরেখার উপরের অংশকে (Caudal peduncle) বা লেজপ্রান্তগুচ্ছ বলে। মাছের লেজ জলে চলাফেরার দিক নির্দেশ করে।
মনে রাখতে হবে বাসস্থান, চলাফেরা ও খাদ্যাভ্যাসের প্রয়োজন অনুযায়ী মাছের মুখ, চোয়াল, শুঁড়, ফুলকা, পাখনা ও লেজের বিভিন্নতা ও রকমারিতার বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।
আরও পড়ুন fishproductionhatchery.com/2023/02/Year-round-Fish-Farming.html