সুসংহত মাছ চাষ
(Integrated Fish Farming or IFF)
ভূমিকা (Introduction): পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিগত কয়েক দশক ধরে আমাদের অন্তর্দেশীয় জলাশয়ের আয়তন বাড়ে নি। বরং শিল্পায়ন, বহুতল অট্টালিকা নির্মাণ প্রভৃতি কারণে জলাভূমির সংকোচন ঘটেছে। অন্যদিকে জনসংখ্যার দ্রুত বিকাশ ঘটে চলেছে এবং মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। তাই মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাবার জন্য সুষ্ঠুভাবে প্রাকৃতিক সম্পদগুলির ব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের একত্রে প্রতিপালন করা যায়- তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে থাকেন। এর ফলশ্রুতি হল সুসংহত চাষ, যেখানে একই পরিকাঠামোয় মাছ সহ অন্যান্য জীবের একত্রে প্রতিপালন করা যায়। 'একের বর্জ্য পদার্থ অন্যের কাছে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বস্তু'-এই নীতির ওপর ভিত্তি করে দেখা গেছে যে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যকে বিঘ্নিত না করে ওই একই কাঠামোর মধ্যে খাদ্যবস্তুর উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব। মাছ চাষের জলাশয়ে বা তার ধার একত্রে মাছ ও ধান চাষ; মাছ-হাঁস চাষ; মাছ-শূকর-পোলট্রি পালন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
সংজ্ঞা (Definition): একই পরিকাঠামোয় মাছ চাষকে কেন্দ্র করে ফসল চাষ, পোলট্রি পালন, শুকর পালন, গৃহপালিত পশু পালন, উদ্যানপালন প্রভৃতির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে যে চাষ প্রথা গড়ে ওঠে তাকেই বলা হয় সুসংহত চাষ প্রথা (Integrated farming)। এই প্রথায় একে অপরের পরিপূরক হিসাবে সহাবস্থান এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য অক্ষুণ্ণ রেখে মোট উৎপাদন বৃদ্ধির প্রচেষ্টা করা হয়।
সুসংহত চাষ প্রথার বিভিন্ন প্রকার (Different types of integrated farming):
1. ধান-মাছ চাষ (Paddy cum Pisciculture),
2. ধান-চিংড়ি চাষ (Paddy cum Prawn culture),
3. মাছ-হাঁস চাষ (Fish farming cum Duckery০)
4. মাছ-পোলট্রি (Fish farming cum Poultry),
5. মাছ-শুকর (Fish farming cum Piggery),
6. মাছ-গবাদি পশু (Fish farming cum Cattle cultivation),
7. মাছ-উদ্যানপালন (Fish farming cum Horticulture),
৪. মাছ-সবজি চাষ (Fish farming cum Vegetable cultivation)
9. মাছ-রেশম চাষ (Fish farming cum Sericulture),
10. মাছ-মাশরুম চাষ (Fish farming cum Mushroom culture)
এছাড়াও মাছের সঙ্গে একাধিক ভিন্ন প্রকারের চাষ একত্রে প্রতিপালন করা যেতে পারে। যেমন-মাছ-শুকর-পোলট্রি; মাছ-গবাদি পশু-উদানপালন প্রভৃতি।
সুসংহত চাষ প্রথার সুবিধা (Advantages of integrated farming)
(i) সুসংহত চাষ প্রথায় একদিকে মাছের সঙ্গে অন্যান্য খাদ্য উপাদান আহরণ করা সম্ভব হয়। অপরদিকে নামমাত্র খরচে চাষিদের অতিরিক্ত আয় হয়।
(ii) এক খামারের (farm) যা বর্জ্য পদার্থ অন্য খামারের কাছে সেটি বিশেষ প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। অর্থাৎ
(iii) পুকুরের ধারে অবস্থিত গোশালা, পোলট্রি, শুকরের খামার থেকে নির্গত বর্জ্য পদার্থগুলি জলে এসে পড়ে যা মাছের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে।
(iv) মাছেদের বর্জ্য পদার্থ এবং বিভিন্ন জৈব ও অজৈব যৌগ পদার্থ সহযোগে গঠিত জলাশয়ের তলদেশের হিউমাস (humus) পরবর্তীকালে জলাশয় সংলগ্ন বিভিন্ন উদ্ভিদের (সবজি, ফুল ও ফল উৎপাদনকারী উদ্ভিদের) সার হিসাবে কাজে লাগে।
(v) পুকুরে জন্মানো জলজ উদ্ভিদ শূকরের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আবার পুকুরের গেঁড়ি, গুগলি, শ্যাওলা প্রভৃতি হাঁসেদের খাদ্য রূপে ব্যবহৃত হয়। বিনিময়ে ওই সব প্রাণী নির্গত মল মাছেরা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে।
(vi) অতিরিক্ত লোকবলের প্রয়োজনে কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকে।