সাধারণ বিজ্ঞান (General Science)
1. প্রত্যেক বস্তুর মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ পদার্থ থাকে। তাকে বস্তুর 'ভর' (Mass) বলে। কোন বস্তুর ভর সব সময় সব জায়গায় একই থাকে।
2. 'ভর' ও 'ভার' শব্দ দুটোর মধ্যে সম্বন্ধ থাকলেও তাদের অর্থ এক নয়। কোন বস্তুর পদার্থ বা ভর-কে যে বল দিয়ে বা যত জোরে পৃথিবী তার কেন্দ্রের দিকে টানে, সেটাই হচ্ছে পৃথিবীতে বস্তুটির ওজন বা ভার।
3. নির্দিষ্ট ভরের জন্য বস্তুর নির্দিষ্ট 'ভার' বা 'ওজন' (Weight) থাকে। কোন বস্তু আমাদের কাছে যতটা ভারী লাগে সেটাই তার ওজন। বস্তুর ওজন পৃথিবীতে ও চাঁদে এক নয়। পৃথিবীতে বস্তুটির যা ওজন, চাঁদে তার ওজন অনেক কম।
4. সাধারণভাবে 'লম্বা' মাপকে 'দৈর্ঘ্য' (Length), 'চওড়া' মাপকে 'প্রস্থ' (Breadth) ও 'উচ্চতা' মাপকে 'বেধ' (Height or Thickness) বলে।
5. কোন লোক কতটা লম্বা, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গার দূরত্ব কতটা বা কোন ঘরের লম্বা-চওড়া-উচ্চতা কত ইত্যাদি বোঝাতে যে মাপকাঠির দরকার তাকে 'দৈর্ঘ্য' (Length) বলে। একে 'এক-মাত্রা' (One Dimension) বলে।
6. কোন ঘরের মেঝে (Floor), কোন জমি বা কোন সমতলের (Plane) নির্দিষ্ট সীমারেখা (Boundary or Perimeter) দিয়ে বদ্ধ জায়গার পরিমাপকে 'ক্ষেত্রফল' (Area) বলে। ক্ষেত্রফল বোঝাবার মাপকাঠি হচ্ছে 'দৈর্ঘ্য দৈর্ঘ্য' (Length x Length)। একে 'দুই-মাত্রা' (Two Dimensions) বলে।
7. কোন বস্তু যতটা জায়গা (space) জুড়ে থাকে তাকে ঐ বস্তুর 'আয়তন' (Volume)। বলে। দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-বেধ নিয়ে কোন ঘরের জুড়ে থাকা জায়গা, কোন তরল বা গ্যাসীয় বস্তুর আয়তন ইত্যাদি বোঝাবার মাপকাঠি হচ্ছে 'দৈর্ঘ্য দৈর্ঘ্য দৈর্ঘ্য' (Length x Length x Length)। একে 'তিন-মাত্রা' (Three Dimensions) বলে।
৪. কোন কাজ করতে বা ঘটতে কতট। সময় লাগে সেটা।-ও আমরা জানতে চাই। কতক্ষণ কোন বস্তু বা অবস্থা স্থির হয়ে আছে বা কতক্ষণে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পৌঁছবে এসব বোঝাবার মাপকাঠি হচ্ছে 'সময়' (Time)।
9. 'ভর' (Mass), 'দৈর্ঘ্য' (Length) ও 'সময়' (Time) এই তিনটি মাপকাঠিকে (M,L,T) 'প্রাথমিক একক' (Basic Unit) বলে। এই প্রাথমিক একক দিয়েই 'গতিবেগ' (speed), 'শক্তি' (Power) প্রভৃতি অন্যান্য জটিল বিষয়ের মাপকাঠি তৈরি হয়। M,L,T এই তিনটি প্রাথমিক একক দিয়ে উৎপন্ন সমস্ত একক-কে 'উৎপন্ন একক' (Derived Unit) বলে।
10. তরল পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন আছে, কিন্তু নির্দিষ্ট আকার নেই; যে পাত্রে থাকে তার আকার নেয়। গ্যাসীয় পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন-ও নেই, আকার-ও নেই।
11. তরল ও গ্যাসীয় পদার্থ উভয়-ই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় প্রবাহিত হতে পারে।
12. সাধারণভাবে, তরল পদার্থ উঁচু জায়গা (Higher Level) থেকে নিচু জায়গায় (Lower Level) যেতে পারে। কিন্তু গ্যাসীয় বা বায়বীয় পদার্থ সবদিকেই যেতে পারে।
13. তরল ও গ্যাসীয় পদার্থ উভয়-ই সবদিকে চাপ দেয়।
14. আমাদের পৃথিবীকে 'বায়ুমণ্ডল' (Atmosphere) বিভিন্ন স্তরে ঘিরে আছে।
15. সবচেয়ে নিচু বায়ুস্তর সবচেয়ে ঘন। বায়ুস্তর যত ওপরের হবে তা তত হালকা হবে।
16. 'বায়ু' প্রধানত নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন আর অল্প পরিমাণ অন্যান্য পদার্থের গ্যাসীয় মিশ্রণ।
17. বায়ু (Air) কোন সময় স্থির থাকে না। গতিশীল বায়ুকে 'বায়ু-স্রোত' বা 'বায়ু- প্রবাহ' (Wind) বলে।
18. মহাজগতে সূর্য, চন্দ্র, নানা গ্রহ এবং অন্যান্য নক্ষত্র প্রভৃতিকে 'জ্যোতিষ্ক' (Heavenly Body) বলে।
19. পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ (Planet) সূর্যের চারদিকে তাদের নির্দিষ্ট বিভিন্ন 'কক্ষপথে' (Orbit) ঘোরে। উপগ্রহগুলি (Satellite) তাদের নিজের কক্ষপথে গ্রহের চারদিকে ঘোরে। চন্দ্র বা চাঁদ হচ্ছে পৃথিবীর উপগ্রহ। গ্রহ-উপগ্রহগুলি আবার যার যার নিজের 'অক্ষের' (Axis) চারদিকে সব সময় পাক (Spin) খায়। এই সূর্য, গ্রহ, উপগ্রহ, ধূমকেতু প্রভৃতিকে নিয়ে আমাদের 'সৌর-জগৎ' (Solar System)।
20. দিন, রাত্রি, সময়, সপ্তাহ, পক্ষ, মাস, বৎসর, পূর্ণিমা, অমাবস্যা, একাদশী, অন্যান্য তিথি, সূর্য-গ্রহণ, চন্দ্র-গ্রহণ, প্রভৃতি সব কিছুই সূর্য-পৃথিবী-চন্দ্র এদের গতি ও অবস্থানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
সৌর-জগতে ঘুরতে ঘুরতে চন্দ্র কোন কোন সময় সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে আসে। পৃথিবীর কিছু অংশে তখন চন্দ্রের ছায়া পড়ে অর্থাৎ চন্দ্রের আড়ালে থাকার জন্য সেখানে সূর্যের আলো পড়তে পারে না। পৃথিবীর সেই অংশ থেকে তখন সূর্যকে দেখা যায় না বা
![]() |
সূর্য গ্রহণ |
'সূর্য গ্রহণ' (Solar Eclipse) হয়। আবার যখন পৃথিবী কোন কোন সময় সূর্য ও চন্দ্রের মাঝে আসে, তখন পৃথিবী আড়াল করায় চন্দ্রের কিছু অংশে সূর্যের আলো পড়তে পারে না। তাকেই 'চন্দ্র-গ্রহণ' (Lunar Eclipse) বলে।
![]() |
চন্দ্রগ্রহণ |
21. মহাজগতে (Universe) কোন দুটি বস্তুর মধ্যে সব সময় আকর্ষণ বা টান রয়েছে। এই আকর্ষণ-বলকে 'মহাকর্ষ' (Gravitation) বলে।
22 পৃথিবীও তার কেন্দ্রের (Centre) দিকে যে কোন বস্তুকে টানে। এই আকর্ষণ বল-কে 'অভিকর্ষ' (Gravity) বলে। কোন বস্তুর ভরের ওপর পৃথিবীর এই অভিকর্ষের জন্যই বস্তুটি আমাদের কাছে ভারী লাগে বা তার ওজন বোঝা যায়। পৃথিবী থেকে বস্তুটির দূরত্ব যত বাড়ে, এই টান তত কমে যায়।
23. পৃথিবীর কাছে থাকার জন্য চাঁদও পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। পৃথিবীর ওপর চাঁদের
এই মহাকর্ষীয় বলের ফলে নদী-সমুদ্রে জোয়ার (High Tide)-ভাটা (Low Tide) হয়।