1. গাছ, পাখি, কয়লা প্রভৃতি হচ্ছে 'প্রাকৃতিক' (Natural) এবং চিরুনি, বই, জুতো প্রভৃতি হচ্ছে 'কৃত্রিম' (Artificial or Man-made) বস্তু (Body)
2. মাছ, মানুষ, বীজ প্রভৃতি হচ্ছে 'চেতন' (Living) এবং তামা, তুলো, মোমবাতি প্রভৃতি হচ্ছে 'জড়' (Non-living) বস্তু।
3. বস্তুর (Body) গঠনের উপাদান-ই হচ্ছে 'পদার্থ' (Matter)।
4. আমরা চারদিকে লোহা, কাঠ, জল, পারদ, বায়ু ইত্যাদি নানারকম পদার্থ 'কঠিন' (Solid), 'তরল' (Liquid) ও 'গ্যাসীয়' (Gaseous) এই তিন অবস্থায় দেখতে পাই।
5. একই পদার্থ 'বিভিন্ন-অবস্থায়' (বরফ, জল, বাষ্প) বা 'বিভিন্ন-রূপে' (কাঠ-কয়লা, কোক- কয়লা, গ্রাফাইট ইত্যাদি) থাকতে পারে।
6. কোন একটি পদার্থ একলাভাবে তার ধর্ম বা গুণ বজায় রাখলে, সেই পদার্থকে 'মৌলিক- পদার্থ' (Element) বলে। লোহা, তামা, হাইড্রোজেন, ক্লোরিন ইত্যাদি প্রত্যেকটি মৌলিক পদার্থ।
7. কয়েকটি মৌলিক পদার্থ মিলে কোন আলাদা ধর্মের পদার্থ তৈরি করলে তাকে 'যৌগিক- পদার্থ' (Compound) বলে। হাইড্রোজেন (Hydrogen) ও অক্সিজেন (Oxygen) এই দুটি মৌলিক পদার্থ মিলে জল (Water) যৌগিক পদার্থটি তৈরি হয়।
৪. কয়েকটি মৌলিক পদার্থ একসঙ্গে মিশে থাকলেও কোন আলাদা ধর্মের পদার্থ তৈরি করে না। একে 'মিশ্রণ' (Mixture) বলে। লোহা ও গন্ধকের গুড়ো মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে তার থেকে চুম্বক দিয়ে লোহার গুঁড়োকে আলাদা করে নেওয়া যায়।
9. কোন কারণ বা ক্রিয়া ঘটিয়ে কোন পদার্থের ধর্মের 'ভৌতিক-পরিবর্তন' (Physical Change) ঘটানো যায়। ঐ কারণ সরিয়ে নিলে আগের অবস্থা ফিরে আসে। এই অস্থায়ী পরিবর্তনে কোন নতুন পদার্থ তৈরি হয় না। বৈদ্যুতিক-বাম্বে (Electric Bulb) বিদ্যুৎ-প্রবাহ গেলে আলো ও তাপ সৃষ্টি হয়; বিদ্যুৎ-প্রবাহ বন্ধ হলে আলো ও তাপ চলে গিয়ে আগের অবস্থা ফিরে আসে।
10. যে ক্রিয়া ঘটিয়ে পদার্থের ধর্মের স্থায়ী ও 'রাসায়নিক-পরিবর্তন' (Chemical Change) করে নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থে পরিণত করা হয় তাকে 'রাসায়নিক-বিক্রিয়া' (Chemical Reaction) বলে। ম্যাগনেসিয়াম পাত-কে তাপ দিয়ে বায়ুর মধ্যে জ্বালিয়ে ঠাণ্ডা করলে আগের ম্যাগনেসিয়াম ফিরে আসে না; স্থায়ী রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে ম্যাগ- নেসিয়াম ও বায়ুর অক্সিজেন মিলে সাদা গুঁড়ো ম্যাগনেসিয়াম-অক্সাইড তৈরি করে। ছবি তোলার সময় আলো ফিল্মের (Film) ওপর পড়ার পর ছবিটির নেগেটিভ (Negative) তৈরি হয়। আলো সরিয়ে নিলে নেগেটিভ থেকে আগের ফিল্ম ফিরে আসে না। রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ফিল্মের রাসায়নিক পদার্থের স্থায়ী রাসায়নিক পরিবর্তন হয়ে যায়।
11. বিভিন্ন পদার্থের বিভিন্ন সাধারণ 'ধর্ম' বা 'গুণ' (Properties) আছে। যেমন-
a) কাঠিন্য (Hardness)-কোন পদার্থের ওপর দাগ কাটা যত কষ্টকর, তার কাঠিন্য তত বেশি। কাঠ থেকে লোহা এবং লোহা থেকে হীরে (Diamond) বেশি কঠিন। কাঁচের তুলনায় হীরে বেশি কঠিন বলে হীরে দিয়ে কাঁচ কাটা হয়।
b) নমনীয়তা (Malleability)-ঘা দিলে বা পেটালে কোন পদার্থ যত সহজে বাড়ে, তার নমনীয়তা তত বেশি। তামা, রুপো ও সোনা পদার্থগুলি অধিক নমনীয়।
c) প্রসারণতা (Ductility)-মোটা থেকে সরু হয়ে তারের মত দৈর্ঘ্যে কোন পদার্থ যত সহজে বাড়ে, তার প্রসারণতা তত বেশি। তামা, রুপো ও সোনা পদার্থগুলি অধিক প্রসার্য্য।
d) ভঙ্গুরতা (Brittleness)-কোন পদার্থের ভঙ্গুরত। যত বেশি, পদার্থটি তত সহজে, ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। কাঁচ পদার্থটি বেশি ভঙ্গুর।
e) কেলাসন-ক্ষমতা (Crystallisation)-যে পদার্থের কেলাসন-ক্ষমতা যত বেশি, তা স্ফটিকাকারে তত সহজে দানা বাঁধে। চুণের তুলনায় মিছরি ভালভাবে কেলাসিত হয়।
f) ঘনত্ব (Density) একই আয়তনে পদার্থ যত বেশি, ঘনত্ব তত বেশি। অক্সিজেন গ্যাসের তুলনায় লোহার ঘনত্ব অনেক বেশি।
৪) সান্দ্রতা (Viscosity)-তরল পদার্থের তারল্য যত কম বা যত বেশি ঘন ও আঠাল, সান্দ্রতা তত বেশি। জলের থেকে মধু ও গ্লিসারিনের সান্দ্রতা বেশি।
h) দ্রবণীয়তা (Solvency)-কোন তরলে অন্য বস্তু যত সহজে গুলে যাবে, সেই তরল তত ভাল দ্রাবক (Solvent)। চিনি বা শুনের পক্ষে জল খুব ভাল দ্রাবক।
i) সংনম্যতা (Compressibility)-বাইরের চাপের ফলে তরল বা গ্যাসীয় পদার্থের আয়তন যত বেশি কমে, তার সংনম্যতা তত বেশি। তরল পদার্থের তুলনায় গ্যাসীয় পদার্থের সংনম্যতা অনেক বেশি।
j) দাহ্যতা (Combustibility or Inflammability)-কোন বস্তু যত সহজে বা যত কম উত্তাপে জ্বলে বা পুড়ে যেতে পারে, তা তত বেশি দাহ্য। হাইড্রোজেন গ্যাস খুবই দাহ্য। অক্সিজেন গ্যাস নিজে দাহ্য নয়, কিন্তু অন্য বস্তুর দহনকে সাহায্য করে।
k) গন্ধ (Odour)-পদার্থের এই গুণের বৈশিষ্ট্যের জন্যই গোলাপের (Rose) এবং কপূরের (Camphor) গন্ধের তফাৎ বুঝি।
(1) বর্ণ (Colour)-গন্ধকের (Sulphur) বর্ণ হলুদ (Yellow) এবং কয়লার (Coal) বর্ণ কালো (Black)। পদার্থের গুণের বৈশিষ্ট্যের জন্যই এই পার্থক্য।
m) স্বাদ (Taste)-পদার্থের এই গুণগত পার্থক্যের জন্যই টক, মিষ্টি, নোন্তা বা ঝাল স্বাদের তফাৎ আমাদের জিব বুঝতে পারে।