বিজ্ঞান কাকে বলে (What is Science)
পারিপার্শ্বিক জগৎ ও বিশ্বজগৎ সম্বন্ধে আমরা চক্ষু (Eye) কর্ণ (Ear) নাসিকা (Nose) জিহ্বা (Tongue) ত্বক (Skin) এই পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভূতি লাভ করি। চোখ দিয়ে দেখে লাল ও নীল রঙের পার্থক্য করি, কান দিয়ে শুনে গান ও বাজনার তফাৎ বুঝি, নাক দিয়ে গন্ধ নিয়ে আতর ও পেট্রোলের পার্থক্য বুঝি, জিব দিয়ে স্বাদ পেয়ে টক-ঝালের তফাৎ করি, আর স্পর্শেন্দ্রিয় ত্বক দিয়ে অনুভব করে ঠাণ্ডা-গরম বুঝতে পারি।
বিশ্ব-প্রকৃতিতে 'জড়' ও 'চেতন' এই দুরকমের বস্তু (Body) আছে। বই, পেনসিল, ফুটবল, বাড়ি প্রভৃতি হচ্ছে জড় বা অচেতন (Non-living) বস্তু। গাছপালা বা জীব-জন্ত প্রভৃতি হচ্ছে সজীব বা চেতন (Living) বস্তু। সজীব বস্তু সম্বন্ধীয় বিজ্ঞানকে 'জীবন-বিজ্ঞান' (Life Science) বলে। গাছ-পালা, লতা-পাতা, শাক-সব্জি সম্বন্ধীয় শ্রেণীকে 'উদ্ভিদ' (Plant) এবং জীব-জন্তু, পশু-পাখী, কীট-পতঙ্গ সম্বন্ধীয় শ্রেণীকে 'প্রাণী' (Animal or Creature)
বলে।
বস্তুর গঠন বা উপাদানকে পদার্থ (Matter) বলে। সকল বস্তুই কিছু স্থান বা আয়তন জুড়ে থাকে এবং সাধারণত আমাদের কোন না কোন ইন্দ্রিয়ের কাছে ধরা পড়ে। আর যা বস্তুর সঙ্গে সব সময়ে যুক্ত থেকে নানা প্রকার ক্রিয়া-কলাপ ঘটায় বা নিয়ন্ত্রণ করে তা হচ্ছে শক্তি (Energy)। আমাদের ইন্দ্রিয় কেবল তখনই শক্তির উপস্থিতি বুঝতে পারে যখন তা বস্তুর ওপর কাজ করে। এই কারণে বস্তু বা পদার্থকে শক্তির বাহন বলে। পদার্থ ও শক্তি বিভিন্ন রূপে বিশ্ব-প্রকৃতিতে থাকে ও কাজ করে।
আমাদের বিভিন্ন ইন্দ্রিয় বা অনুভূতির সাহায্যে পদার্থ ও শক্তির অস্তিত্ব বা পরিবর্তন সম্বন্ধে আমরা বুঝতে পারি। ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে লাভ করা এই সমস্ত অভিজ্ঞতাকেই আমরা 'জ্ঞান' (Knowledge)- বলি। বিশ্বের নানা রহস্য ও বৈচিত্র্যকে আরও ভাল করে জানার জন্য মানুষ এই জ্ঞানকে নানা পর্যবেক্ষণ (Observation), বুদ্ধি (Intelligence) দিয়ে বিশ্লেষণ (Analysis) ও পরীক্ষা (Test or Experiment) দ্বারা সত্যে প্রমাণিত, যুক্তিসঙ্গত ও সু-সংবদ্ধ করে। তখন বোঝা যায় যে বিশ্বজগতের অসংখ্য ঘটনা, দেশকাল নির্বিশেষে, কতগুলি নিয়মের বন্ধনে চলে। অজিত এই বিশেষ জ্ঞানকে 'বিজ্ঞান' (Science) বলে। বিজ্ঞানের সাহায্যেই মানুষ তার জীবন ধারণ আরও সুবিধার, আরও সুখের, আরও চমকপ্রদ করে তোলার জন্য নিত্য নতুন চেষ্টা করে যাচ্ছে।
পারস্পরিক সম্বন্ধ থাকলেও 'জ্ঞান' ও 'বুদ্ধি' শব্দ ছটোর মানে এক নয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে জ্ঞান ও বুদ্ধির বিক৷শও হতে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। নিদিষ্ট বয়সে বুদ্ধির পরিমাপ ( Intelligence Quotient or I. Q. ) আসলে মানসিক বয়স-ই ( Mental Age ) নির্ণয় করে ৷ সাথে জ্ঞান ও বুদ্ধির বিকাশও হতে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। নির্দিষ্ট বয়সে বুদ্ধির পরিমাপ (Intelligence Quotient or I. Q.) আসলে মানসিক বয়স-ই (Mental Age) নির্ণয় করে।
আমাদের লক্ষ্য করা নানা ঘটনা বা জানা বিভিন্ন বিষয় কোন রকম বিশেষ প্রমাণ ছাড়া স্বাভাবিক বুদ্ধি দিয়েই বুঝতে পারি। এই সত্যগুলিকে 'স্বতঃসিদ্ধ' (Axiom) বলে। এই স্বতঃ- সিদ্ধগুলির ওপর নির্ভর করে যুক্তিপূর্ণ যে কোন প্রমাণ বা সিদ্ধান্ত-ই হচ্ছে বিজ্ঞান শিক্ষার বিষয় বা লক্ষ্য।
প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে অচেতন পদার্থ ও শক্তির সম্যক বিজ্ঞান-ই 'রসায়ন-বিজ্ঞান' (Cl emistry) ও 'পদার্থ-বিজ্ঞান' (Physics) নামে পরিচিত। 'গণিত-শাস্ত্র' (Mathematics) এই বিজ্ঞানের-ই আরেকটি শাখা। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে কত জোরে গেলে কত সময় লাগবে, কোন্ বস্তুর ওজন কত, টাকা-পয়সার হিসাব বা ভাগাভাগি কিভাবে করব, হিসাবে বা ভাগে লাভ-ক্ষতি কার এবং কত, কোন সীমাবদ্ধ জায়গার আকৃতি কেমন, সেই সীমা কতটা জায়গা নির্দেশ করছে ইত্যাদি নানা প্রশ্নের উত্তর একমাত্র গণিত-শাস্ত্রই আমাদের দিতে পারে। 'পাটীগণিত' (Arithmetic), 'বীজগণিত' (Algebra) ও 'জ্যামিতি' (Geometry) হচ্ছে গণিত-শাস্ত্রের-ই বিভিন্ন শাখা।