লাভজনক মাছ ও চিংড়ি চাষ: আধুনিক পদ্ধতির A-Z গাইড

মাছ ও চিংড়ি চাষের সম্পূর্ণ নির্দেশিকা খুঁজছেন? আধুনিক কৌশল, জাত নির্বাচন, পুকুর ব্যবস্থাপনা থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত বিস্তারিত জানুন। লাভজনক জলজ চাষে সফল হন।

লাভজনক মাছ ও চিংড়ি চাষ: আধুনিক পদ্ধতির A-Z গাইড

একটি খামারের পুকুরে মাছ এবং চিংড়ি মিশ্র চাষের দৃশ্য, যেখানে পরিষ্কার জল এবং সুস্থ জলজ প্রাণী দেখা যাচ্ছে।

জলজ সম্পদ আমাদের প্রাকৃতিক আয়ের এক বিশাল উৎস, যার মধ্যে মাছ ও চিংড়ি চাষ অন্যতম। বিশ্বের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রোটিনের চাহিদা পূরণে এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে এই খাত এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্বাঞ্চলে, যেখানে নদী-নালা আর খাল-বিলের প্রাচুর্য, সেখানে মাছ ও চিংড়ি চাষের একটি দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। বর্তমানে, ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতির পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই চাষকে আরও লাভজনক ও টেকসই করা সম্ভব হচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর চাপ কমিয়ে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে কিভাবে মাছ ও চিংড়ি চাষকে একটি সফল বাণিজ্যিক উদ্যোগে পরিণত করা যায়, তা নিয়েই আমাদের আজকের বিস্তারিত আলোচনা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যখন কৃষি খাত নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছে, তখন জলজ চাষের গুরুত্ব আরও বাড়ছে। এটি কেবল খাদ্য উৎপাদনই নয়, অসংখ্য মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম প্রধান উপায়। এই প্রবন্ধে আমরা মাছ ও চিংড়ি চাষের মৌলিক ধারণা থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক কৌশল এবং এর অর্থনৈতিক প্রভাব পর্যন্ত সবকিছু নিয়ে আলোকপাত করব। নতুন উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে অভিজ্ঞ চাষী সকলের জন্যই এই তথ্যগুলো সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।

মাছ ও চিংড়ি চাষের গুরুত্ব ও সম্ভাবনা

আধুনিক বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে মৎস্য ও চিংড়ি চাষ এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মতো নদীমাতৃক অঞ্চলে এর সম্ভাবনা অপরিসীম। এই খাতটি শুধু প্রোটিনের চাহিদা পূরণে নয়, গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঐতিহ্যগত পদ্ধতির পাশাপাশি বর্তমানে বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনগুলি এই চাষকে আরও লাভজনক ও টেকসই করে তুলেছে। আজকের আলোচনায় আমরা মাছ ও চিংড়ি চাষের আধুনিক পদ্ধতি, চ্যালেঞ্জ এবং সফলতার কৌশল নিয়ে বিস্তারিত জানব, যা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঐতিহ্যবাহী কৃষিকাজ যেখানে ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে, সেখানে জলজ চাষ এক বিকল্প ও নির্ভরযোগ্য আয়ের উৎস হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে। এটি উপকূলীয় এবং অভ্যন্তরীণ উভয় অঞ্চলের জন্যই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই শিল্প কেবল স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে না, আন্তর্জাতিক বাজারেও এর একটি বিশাল চাহিদা রয়েছে, যা রপ্তানি আয়ে অবদান রাখে।

সফল চাষের জন্য সঠিক স্থান ও পুকুর নির্বাচন

সফল মৎস্য ও চিংড়ি চাষের প্রথম ধাপ হলো উপযুক্ত স্থান ও পুকুর নির্বাচন। চাষের জন্য এমন একটি স্থান বেছে নেওয়া উচিত যেখানে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পৌঁছায় এবং জলের উৎস সহজলভ্য। পুকুরের মাটি এমন হতে হবে যেন জল ধরে রাখতে পারে এবং তাতে ক্ষার বা অতিরিক্ত লবণের পরিমাণ সহনীয় থাকে। আদর্শ পুকুরের আয়তন সাধারণত এক থেকে পাঁচ বিঘা পর্যন্ত হতে পারে, তবে আধুনিক নিবিড় চাষে ছোট আকারের পুকুরও ব্যবহৃত হয়। পুকুর তৈরির সময় এর গভীরতা, পাড়ের উচ্চতা এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থা সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা জরুরি। গভীরতা ৪-৬ ফুট হলে ভালো হয়, যা সূর্যের আলো ও তাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এছাড়া, পুকুরের আশেপাশে বড় গাছপালা না থাকা বাঞ্ছনীয়, কারণ এদের পাতা পচে জল দূষিত করতে পারে এবং শিকড় পুকুরের পাড়কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। পুকুরের তলদেশ সমান ও পরিষ্কার রাখা উচিত যেন মাছের অবাধ চলাচল নিশ্চিত হয়।

উন্নত জাত নির্বাচন ও পোনা সংগ্রহ

চাষের সাফল্যের জন্য উন্নত জাতের পোনা নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাছের ক্ষেত্রে রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙাশ, তেলাপিয়া, শিং, মাগুর ইত্যাদি এবং চিংড়ির ক্ষেত্রে বাগদা, গলদা চিংড়ি অন্যতম জনপ্রিয়। পোনা কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন সেগুলো সুস্থ, সবল এবং রোগমুক্ত হয়। বিশ্বস্ত হ্যাচারি থেকে পোনা সংগ্রহ করা উচিত এবং পরিবহনের সময় অক্সিজেনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে। মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরের খাবার গ্রহণকারী মাছের পোনা নির্বাচন করা হয়, যেমন – রুই পৃষ্ঠের খাবার খায়, কাতলা মধ্যস্তরের এবং মৃগেল তলদেশের খাবার গ্রহণ করে। এতে পুকুরের খাদ্য উপাদানের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়। পোনার আকার ও বয়স চাষের পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে। সাধারণত, ৪-৫ সেন্টিমিটার আকারের পোনা চাষের জন্য উপযুক্ত। পোনা মজুদের আগে পুকুরের জলের তাপমাত্রা ও পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করা উচিত।

Image related to উন্নত জাত নির্বাচন ও পোনা সংগ্রহ

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পুকুর প্রস্তুতকরণ

পুকুর প্রস্তুতকরণ একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া যা চাষের ফলনকে সরাসরি প্রভাবিত করে। প্রথমে পুকুরের জল শুকিয়ে তলদেশ পরিষ্কার করতে হয়, অবাঞ্ছিত আগাছা ও রাক্ষুসে মাছ অপসারণ করতে হয়। এরপর পুকুরের তলদেশে চুন প্রয়োগ করা হয়, যা মাটির অম্লতা দূর করে এবং রোগজীবাণু নাশ করে। প্রতি শতাংশে ১-২ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে। চুন প্রয়োগের কয়েকদিন পর জৈব সার, যেমন গোবর বা কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করা হয়, যা পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য, অর্থাৎ ফাইটোপ্লাঙ্কটন ও জুপ্লাঙ্কটন উৎপাদনে সাহায্য করে। রাসায়নিক সার, যেমন ইউরিয়া ও টিএসপি, পরিমিত মাত্রায় ব্যবহার করে প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে। সার প্রয়োগের ৭-১০ দিন পর যখন জলের রঙ সবুজাভ বা বাদামী হয়, তখন পোনা মজুদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়। জলের গুণগত মান, বিশেষ করে পিএইচ, তাপমাত্রা এবং দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা অপরিহার্য।

সুষম খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও রোগ প্রতিরোধ

মাছ ও চিংড়ির সুষম খাদ্য ব্যবস্থাপনা তাদের দ্রুত বৃদ্ধি ও সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফ্লোটিং ও সিঙ্কিং ফিড পাওয়া যায়, যা মাছ ও চিংড়ির প্রজাতির ওপর নির্ভর করে ব্যবহার করা হয়। সঠিক খাদ্যের পরিমাণ এবং সময় নির্ধারণ করতে হবে। অতিরিক্ত খাদ্য দিলে জল দূষিত হতে পারে এবং কম খাদ্য দিলে বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। নিয়মিত বিরতিতে এবং নির্দিষ্ট স্থানে খাদ্য প্রদান করা উচিত। মাছ ও চিংড়ির রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত পুকুর পর্যবেক্ষণ এবং জলের গুণগত মান বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলের পিএইচ, অ্যামোনিয়া, নাইট্রেট এবং অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করে অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রোগাক্রান্ত মাছ বা চিংড়ি দেখা গেলে দ্রুত সেগুলো আলাদা করে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে বা অপসারণ করতে হবে, যাতে রোগ অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে। নিয়মিত জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করা উচিত।

মিশ্র চাষ: সুবিধা ও কৌশল

মিশ্র চাষ হলো একই পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বা চিংড়ি একসঙ্গে চাষ করা। এই পদ্ধতি অত্যন্ত লাভজনক কারণ এটি পুকুরের বিভিন্ন স্তরের খাদ্য উপাদানের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করে। উদাহরণস্বরূপ, রুই, কাতলা, মৃগেল এবং গ্রাস কার্পের মিশ্র চাষ ব্যাপক জনপ্রিয়। রুই জলের মধ্যস্তর থেকে খাদ্য গ্রহণ করে, কাতলা পৃষ্ঠ থেকে, মৃগেল তলদেশ থেকে এবং গ্রাস কার্প জলজ আগাছা খায়। এভাবে প্রতিটি প্রজাতি একে অপরের খাদ্যের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে পুকুরের সামগ্রিক উৎপাদন বৃদ্ধি করে। চিংড়ির ক্ষেত্রেও মাছের সাথে মিশ্র চাষ করা যেতে পারে, তবে প্রজাতির সামঞ্জস্যতা এবং তাদের খাদ্যাভ্যাস বিবেচনা করা জরুরি। মিশ্র চাষে সঠিক অনুপাতের পোনা মজুদ করা প্রয়োজন। এই পদ্ধতিতে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকিও কিছুটা কমে আসে, কারণ একটি প্রজাতিতে রোগ দেখা দিলেও তা অন্য প্রজাতিতে নাও ছড়াতে পারে। এটি প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রেখে সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করে।

চিংড়ি চাষের বিশেষ দিক ও যত্ন

চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে বাগদা ও গলদা চিংড়ির চাষ অত্যন্ত সংবেদনশীল। পুকুরের জলের লবণাক্ততার মাত্রা চিংড়ির প্রজাতির ওপর নির্ভর করে। বাগদা চিংড়ি সাধারণত লবণাক্ত বা ঈষৎ লবণাক্ত জলে ভালো হয়, আর গলদা চিংড়ি স্বাদু জলে। পুকুরের পাড় শক্ত ও উঁচু হওয়া উচিত যাতে জোয়ারের জল বা বৃষ্টির জলে পাড় ভেঙে না যায়। চিংড়ির বৃদ্ধির জন্য পরিপূরক খাদ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের বিশেষ পুষ্টির চাহিদা মেটাতে উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাদ্য সরবরাহ করা উচিত। চিংড়ির খাদ্যে ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি তাদের খোলস তৈরিতে সহায়ক। জলের গুণগত মান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, কারণ চিংড়ি জলের দূষণের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। অ্যামোনিয়া বা নাইট্রাইট-এর সামান্য বৃদ্ধিও তাদের জন্য মারাত্মক হতে পারে। নিয়মিত শেওলা পরিষ্কার করা এবং জলের অক্সিজেন মাত্রা পরীক্ষা করা জরুরি।

সফল চাষের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন

আধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন মৎস্য ও চিংড়ি চাষকে আরও কার্যকর এবং পরিবেশবান্ধব করে তুলেছে। বায়োফ্লক পদ্ধতি (Biofloc Technology - BFT), রেসওয়ে সিস্টেম (Raceway System) এবং রিসার্কুলেটিং অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম (Recirculating Aquaculture System - RAS) মতো উন্নত প্রযুক্তি কম জলে অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করে। এই প্রযুক্তিগুলি জলের অপচয় কমায় এবং জলের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। স্বয়ংক্রিয় খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা, জলের গুণগত মান পরিমাপক যন্ত্র এবং স্মার্ট সেন্সর ব্যবহার করে দূর থেকে পুকুর পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে, যা শ্রম ও সময় উভয়ই বাঁচায়। এছাড়া, উন্নত জেনেটিক প্রযুক্তির মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং দ্রুত বর্ধনশীল মাছ ও চিংড়ির জাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে। ইন্টিগ্রেটেড মাল্টি-ট্রফিক অ্যাকুয়াকালচার (IMTA) পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ একসঙ্গে চাষ করে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখা হয়। এ সকল আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে চাষীরা প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় অনেক বেশি লাভবান হতে পারেন।

ফসল সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ

সঠিক সময়ে ফসল সংগ্রহ এবং কার্যকর বাজারজাতকরণ মাছ ও চিংড়ি চাষের লাভজনকতার জন্য অত্যন্ত জরুরি। মাছ ও চিংড়ি যখন বিক্রয়যোগ্য আকারে পৌঁছায়, সাধারণত ৪-৬ মাস পর, তখন সংগ্রহ করা উচিত। অতিরিক্ত সময় পুকুরে রাখলে তাদের ওজন বৃদ্ধি ধীর হয়ে যায় এবং খাদ্যের খরচ বাড়ে। সাধারণত, জাল টেনে বা পুকুরের জল সেচ করে মাছ ও চিংড়ি সংগ্রহ করা হয়। সংগ্রহের সময় সতর্ক থাকতে হবে যাতে জলজ প্রাণীরা আহত না হয়, কারণ আহত মাছ বা চিংড়ির বাজার মূল্য কমে যায়। সংগ্রহের পর দ্রুততম সময়ে সেগুলো বাজারে পাঠাতে হবে বা সংরক্ষণ করতে হবে। হিমায়ন (Freezing) বা বরফজাত করে দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা যায়। বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে স্থানীয় বাজার, পাইকারি বিক্রেতা বা সরাসরি ভোক্তাদের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অনলাইনে বাজারজাতকরণও আজকাল একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। পণ্যের মান বজায় রাখা এবং সময়মতো সরবরাহ নিশ্চিত করা সফল বাজারজাতকরণের মূল চাবিকাঠি।

Interested in learning more about this topic?

Find Related Products on Amazon

Conclusion

মাছ ও চিংড়ি চাষ কেবল একটি ঐতিহ্যবাহী পেশা নয়, এটি আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি লাভজনক শিল্প। সঠিক পরিকল্পনা, উন্নত জাতের পোনা নির্বাচন, বৈজ্ঞানিক পুকুর ব্যবস্থাপনা, সুষম খাদ্য সরবরাহ এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে এই খাত থেকে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রোটিনের চাহিদা পূরণে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এটি একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ ক্ষেত্র হতে পারে, যা একদিকে যেমন আত্মনির্ভরশীলতা আনবে, তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই, প্রয়োজন সঠিক জ্ঞান ও কৌশল প্রয়োগ করে এই সোনালী সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো। আসুন, আমরা সম্মিলিতভাবে এই শিল্পের উন্নয়নে কাজ করি এবং নিজেদের পাশাপাশি দেশের সমৃদ্ধিও নিশ্চিত করি। আধুনিক প্রযুক্তির সাথে স্থানীয় জ্ঞান ও দক্ষতার সংমিশ্রণ এই খাতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।

Frequently Asked Questions

মিশ্র চাষ কেন লাভজনক?

মিশ্র চাষে পুকুরের বিভিন্ন স্তরের খাদ্য উপাদান ব্যবহৃত হয়, যা একক চাষের চেয়ে বেশি উৎপাদন নিশ্চিত করে। এতে সম্পদের সদ্ব্যবহার হয় এবং সার্বিক লাভ বৃদ্ধি পায়।

চিংড়ি চাষে কি ধরণের রোগ বেশি হয়?

চিংড়ি চাষে সাধারণত সাদা দাগ রোগ (White Spot Syndrome Virus-WSSV), কালো ফুলকা রোগ এবং ইএমএস (Early Mortality Syndrome) বেশি দেখা যায়। জলের গুণগত মান ভালো রাখলে রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

পুকুরে জলের গুণগত মান কিভাবে বজায় রাখবেন?

নিয়মিত পিএইচ, অ্যামোনিয়া, নাইট্রেট ও অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে জল পরিবর্তন, চুন প্রয়োগ, এয়ারেটর ব্যবহার এবং সঠিক খাদ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জলের গুণগত মান বজায় রাখা যায়।

মাছ ও চিংড়ির খাদ্যে কি থাকা উচিত?

তাদের খাদ্যে উচ্চমানের প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ সঠিক পরিমাণে থাকা উচিত। চিংড়ির জন্য ক্যালসিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

পুঁজিবিনিয়োগের আগে কী কী বিষয় বিবেচনা করা উচিত?

পুঁজিবিনিয়োগের আগে স্থান নির্বাচন, জলের উৎস, বাজার চাহিদা, প্রাথমিক খরচ, লাভজনকতার সম্ভাবনা এবং চাষের কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণা করা উচিত।

আধুনিক চাষ পদ্ধতিতে কী কী নতুনত্ব আছে?

আধুনিক পদ্ধতিতে বায়োফ্লক, রেসওয়ে, আরএএস (RAS) এবং স্মার্ট সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যা কম জলে অধিক উৎপাদন এবং পরিবেশবান্ধব চাষ নিশ্চিত করে।

ফসল সংগ্রহের সেরা সময় কখন?

সাধারণত, মাছ ও চিংড়ি যখন বিক্রয়যোগ্য আকার ও ওজনে পৌঁছায় (৪-৬ মাস পর), তখনই ফসল সংগ্রহের সেরা সময়। অতিরিক্ত দেরি করলে খাদ্যের খরচ বাড়ে এবং বৃদ্ধি ধীর হয়ে যায়।

Keywords

মৎস্যচাষ, চিংড়িচাষ, জলজকৃষি, মৎস্যপালন, পুকুরব্যবস্থাপনা

References

Shaharuk Islam

Hi I am Shaharuk Islam. I enjoyed in writing articles and spread knowledge cross over the internet.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

Ad

Magspot Blogger Template

Ad

amazon.in
amazon.in

نموذج الاتصال