ডিম পোনা চাষ পদ্ধতি How to cultivate dimpona in bengali

ডিমপোনা  চাষের  পদ্ধতি


মাছ চাষের একটি গুরুপ্তপূর্ণ বিষয় হল ডিমপোনা চাষ ।এই ডিমপোনা  চাষে একজন চাষি যতটা  সফল সে ততটাই লাভবান হতে পারে । নিম্নে প্রতিটি  বিষয়েই  বলা হল  
 • (Important steps of Composite or Mixed composite fish culture) :


পুকুর প্রস্তুতি (Preparation of Pond or tank) :

প্রধানত চার রকমের পুকুর মাছ চাষে ব্যবহৃত হয়। 

  • 1. ব্রিডিং পুকুর (Breeding tank), 2. আঁতুড় পুকুর (Nursery tank), 3. পালন পুকুর (Rearing tank) এবং 4. সঞ্জয়ী পুকুর (Storing tank)। 
প্রত্যেক প্রকার পুকুর তৈরির জন্য স্বতন্ত্র ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক। কারণ মাছের পরিস্ফুরণের বিভিন্ন দশা ভিন্ন ভিন্ন পুকুরের মাধ্যমে পরিচর্যা করা হয়ে থাকে। যেমন—মেজর কার্পের নিষিক্ত ডিম 18-24 ঘণ্টায় ফুটে নির্গত হয় ডিমপোনা (Hatchling or Spawn) দশা। ডিম থেকে ডিমপোনা তৈরির জন্য ব্রিডিং পুকুরের প্রয়োজন হয়। ডিমপোনা দৈর্ঘ্যে 1-1.5 ইঞ্জির মতো বৃদ্ধি পেয়ে সৃষ্টি হয় ধানিপোনা (Fry)। ডিমপোনা থেকে ধানিপোনা পালনের জন্য ব্যবহৃত হয় আঁতুড় পুকুর। আঁতুড় পুকুরে ধানিপোনা 5-6 ইঞ্জির মতো লম্বা হলে তাকে চারাপোনা (Fingerling) বলে। চারাপোনা প্রতিপালনের জন্য প্রয়োজন হয় পালন পুকুরের। পরিশেষে চারাপোনাদের পরিণত অবস্থায় পৌঁছানো এবং সঞ্চয় ও সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয় সঞ্জয়ী পুকুর।                 

      
Airetor
                         


 1. ব্রিডিং পুকুর (Breeding tank) :


পশ্চিমবঙ্গে মাছ চাষিরা যে পুকুরকে ব্রিডিং পুকুর হিসাবে ব্যবহার করেন তার দৈর্ঘ্য 20-40 ফুট, প্রস্থ 15-30 ফুট এবং গভীরতা প্রায় 3 ফুট থাকে। বর্ষার পূর্বে শুষ্ক পুকুরের আগাছা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে এবং তলদেশের জমি কুপিয়ে ওলট-পালট করা প্রয়োজন। এরপর বর্ষা নামলে তাতে জল জমা হতে থাকবে। এই সময় নদী থেকে সংগৃহীত ডিমপোনা অথবা প্রণোদিত প্রজননের মাধ্যমে সংগৃহীত ডিমপোনা ব্রিডিং পুকুরে আনা হয়। 18-24 ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে মাছের লার্ভা বা ডিমপোনা (spawn) নির্গত হয়। এদেরকে 2-3 দিনের মধ্যে সূক্ষ্ণ জাল দিয়ে সংগ্রহ করে ব্রিডিং পুকুর থেকে আঁতুড় পুকুরে সরিয়ে নেওয়া হয়। ডিমপোনা প্রাথমিক অবস্থায় তার কুসুমথলিতে সঞ্চিত খাদ্যগ্রহণ করেই বাড়তে থাকে। পরবর্তী পর্যায়ে প্রধানত জলে সৃষ্ট সবুজ খাদ্যকণা (ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন) ও প্রাণীকণা (জুপ্ল্যাঙ্কটন) খেয়ে বেড়ে ওঠে।


2. আঁতুড় পুকুর (Nursery tank) :


ডিমপোনা ও ডিমপোনার পরবর্তী পর্যায়ের সুষম বৃদ্ধি এবং পরিচর্যার জন্য আঁতুড় পুকুরের প্রস্তুতিকরণই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ। অর্থাৎ আঁতুড় পুকুর যত ভালোভাবে তৈরি হবে মাছের ফলন ততই ভালো হবে। আঁতুড় পুকুর প্রস্তুতিকালে পর্যায়ক্রমে যে ব্যবস্থাগুলি নিতে হয় তা হল— পুকুরকে সম্পূর্ণরূপে রোদে শুকানো, আগাছা পরিষ্কার, জল ভরা (প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম উপায়ে) জলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় মারা এবং জলে চুন ও প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ।
আঁতুড় পুকুরের দৈর্ঘ্য 300-400 ফুট, প্রস্থ 200-300 ফুট এবং গভীরতা 4 ফুট হয়। বর্ষার প্রারম্ভে শুষ্ক পুকুরের তলদেশের মাটি ভালোভাবে চষে ধঞে গাছ (প্রাকৃতিক সার) মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়। ফলে বর্ষায় প্রচুর পরিমাণে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন জন্মায়। 4 ফুট গভীরতা বিশিষ্ট পুকুরের বিঘা প্রতি জলে 20 কেজি মহুয়ার খোল, 150 কেজি কাঁচা গোবর, 10 কেজি বাদামের খোল, 20 কেজি ভেলি গুড় উচিত। মহুয়ার খোল প্রয়োগের ফলে প্রাথমিক পর্বে অবাঞ্ছিত পোকামাকড় মরে যায়, পরবর্তীকালে ওই মহুয়ার খোলই অন্যান্য খোলের মতো জৈব সারের কাজ করে। অর্থাৎ মহুয়ার খোল, কাঁচা গোবর, বাদামের খোল, ভেলি গুড় প্রভৃতি প্রয়োগের ফলে পুকুরে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন ও জুপ্ল্যাঙ্কটন উৎপাদনে সহায়তা করে। এ ছাড়া জলাশয়ে pH -এর সঠিক মাত্রা (7.5-8.5) ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী চুন জলের উপরিতলে ছড়িয়ে দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
এইভাবে আঁতুড় পুকুর প্রস্তুত করার পর বিঘা প্রতি 8-10 লাখ হারে ডিমপোনা ছাড়া হয়। পুকুর প্রস্তুতির 72 ঘণ্টার মধ্যে ডিমপোনা ছাড়তে হবে। ডিমপোনা ছাড়ার 5/6 দিন পর থেকে মাঝে মাঝে 1/4 ইঞ্চির ফাঁসের জাল টানলে ডিমপোনা সতেজ থাকে। ডিমপোনার সুষম পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট পরিমাণ পরিপূরক খাদ্য (supplementary food) জলের ওপর ছড়িয়ে দিতে হবে। পরিপূরক খাদ্য হিসাবে কাঁচা গোবর, গুড়, ইষ্ট পাউডার, গমের আটা, বাদামের খোল ইত্যাদির মিশ্রণ পচানো অবস্থায় দেওয়া হয়। উক্ত পচানো খাবারের উপস্থিতিতে পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্ল্যাঙ্কটনের সৃষ্টি ঘটে। 14 থেকে 15 দিন পর ডিমপোনাগুলি দৈর্ঘ্যে প্রায় এক ইঞ্চি আকারের ধানিপোনায় পরিণত হয়। আঁতুড় পুকুরে ধানিপোনার আবির্ভাবের পর ‘Aerator' নামক যন্ত্র দ্বারা বা অন্য কোনো পদ্ধতির সাহায্যে (জলকে অনবরত আলোড়িত করে) পুকুরের জলে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে যতদিন ওই পুকুরে ধানিপোনাদের রাখা হয় (প্রতিদিন রাত 10টা থেকে ভোর টো পর্যন্ত)। এরপর ধানিপোনাগুলিকে জাল দিয়ে সংগ্রহ করে পালন পুকুরে ছাড়া হয়।


3. পালন পুকুর (Rearing tank) :


পালন পুকুর আঁতুড় পুকুর অপেক্ষা আয়তনে বড়ো। এই পুকুর দৈর্ঘ্যে 1000 ফুট, প্রস্থে 500 ফুট এবং গভীরতায় 6 ফুট হওয়া বাঞ্ছনীয়। এখানে ধানিপোনা বেড়ে চারপোনায় পরিণত হয়। পালন পুকুরের প্রস্তুতিকরণ ও পরিচর্যা পদ্ধতি মোটামুটিভাবে আঁতুড় পুকুরের অনুরূপ। পুকুর পাড়ের আগাছা সরিয়ে ফেলা, পুকুরের শ্যাওলা ও পাঁক পরিষ্কার, চুন ও সার প্রয়োগ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পরিপূরক খাদ্য সরবরাহ করা প্রয়োজন। পুকুরের মাটি ও জলের pH বিশ্লেষণ করে প্রয়োজন অনুযায়ী চুন প্রয়োগ করার পর জৈব সার (বিশেষত গোবর) এবং পরে রাসায়নিক সার (অ্যামোনিয়াম সালফেট, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, ডাইঅ্যামোনিয়াম ফসফেট) দিতে হয়। সরষে বা বাদাম খোলের গুড়ো এবং চালের কুঁড়ো সমপরিমাণ মিশিয়ে পরিপূরক খাদ্য তৈরি করা হয়। পালন পুকুরে ধানিপোনার মোট সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে পরিপূরক খাদ্যের সরবরাহ করতে হয়। ক্রমশ ওই খাদ্যের পরিমাণ বাড়ানো হলে ধানিপোনার বৃদ্ধি সন্তোষজনক হবে।

পালন পুকুরে কয়েকদিন অন্তর অন্তর জাল টানা হয় যাতে মাছগুলি সতেজ ও সক্রিয় থাকে। এইভাবে 3-4 মাস পরিচর্যার পর ধানিপোনাগুলি 5-6 ইঞি লম্বা চারাপোনায় পরিণত হয়। পরিশেষে টানা জালের সাহায্যে এদেরকে সংগ্রহ করা হয়। প্রয়োজন ও পরিস্থিতি অনুযায়ী কিছু মাছকে বিক্রির জন্য বাজারে পাঠানো হয় এবং বাকি মাছদের আরও বড়ো করার জন্য সঞ্চয়ীপুকুরে স্থানান্তরণ করা হয়।


4. সঞ্জয়ী পুকুর (Storing tank) :


 পুকুরে চারাপোনাগুলিকে প্রাকৃতিক ও পরিপূরক খাদ্যের সহায়তায় বড়ো করে পরিণত করা হয় তাকে সঞ্জয়ী পুকুর বলে। এহেন পুকুর আয়তনে পালন পুকুর অপেক্ষা অনেক বেশি বড়ো; দৈর্ঘ্যে 5000 ফুট, প্রস্থে 2000 ফুট এবং গভীরতায় 7-10 ফুট হয়ে থাকে। সাধারণভাবে সঞ্চয়ী পুকুরের প্রস্তুতি ও পরিচর্যা পাযেলন পুকুরের ন্যায়। এই পুকুরের জল স্বল্প পরিমাণে ক্ষারীয় হওয়া বাঞ্ছনীয়, তার জন্য পুকুরে প্রয়োজন অনুযায়ী চুন প্রতি মাসে ছড়িয়ে দিতে হয়। তা ছাড়া মাছের উপযুক্ত বৃদ্ধির দিকে লক্ষ রেখে যথেষ্ট পরিমাণে এবং নিয়মিত (সপ্তাহে করে) জৈব সার, অজৈব সার ও পরিপূরক খাদ্য সরবরাহ করা অত্যন্ত জরুরি। তা ছাড়া প্রতিদিন সকালে রাইস ব্রান, বাদাম খোল, সূর্যমুখী বীজের খোল, তুলো বীজের খোল (60: 10: 10:10 অনুপাতে) প্রয়োগ করলে সুফল পাওয়া যায়।
     


 প্রয়োজনে  আমাদের হ্যাচারিতে যোগাযোগ করতে পারেন,আমাদের হ্যাচারীতে পুকুরচাষের  যাবতীয় ডিমপোনা   ও চারাপোনা পাওয়া যায়। 

     
       
                           ফোন- ৮৩৪৩৮৮৯৪২৪(মিটু)
                                     ৮৫১৪০২৯১৫৪(মিলু)
                                      ৭৫৫০৮৭২৪৮৪(শাহারুক)
                    Google Maps   ------fish prodaction hachary

  যোগাযোগের  টীকানা      পেটলাবাজার      থানা- দিনহাটা, জেলা-কুচবিহার






Shaharuk Islam

Hi I am Shaharuk Islam. I enjoyed in writing articles and spread knowledge cross over the internet.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

Ad

Magspot Blogger Template

Ad

amazon.in
amazon.in

نموذج الاتصال