ইলিশ মাছের অর্থনৈতিক গুরুত্ব | Economic importance of hilsa fish in Bengali

ইলিশ মাছ আমাদের একটি অত্যন্ত প্রিয় খাদ্য। সবাই ইলিশ মাছ খেতে চায়। বর্ষার দিনে সবার আগেই মনে পড়ে ইলিশ মাছের কথা। আমাদের দেশে কিন্তু অনেকেই ইলিশ মাছ সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানে না। সেইজন্য এখানে ইলিশ মাছ সম্বন্ধে কিছু আলোচনা করা হলো।

ইলিশ

ইলিশ মাছ সম্বন্ধে আমাদের কিছু ভুল ধারণা আছে। এই ভুল ধারণা কিন্তু নতুন নয়, বহু পুরাতন। অনেকে বলেন পশ্চিমবঙ্গে আর ইলিশ মাছ পাওয়া যাবে না। এই ধারণা অত্যন্ত ভুল। কয়েক বছর ধরে ইলিশ মাছের উৎপাদন বেশ বেড়ে গেছে। তার একটা হিসাব এখানে দেওয়া হলো।
গত ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ভারতে মোট ইলিশ মাছ ধরা পড়েছে ৫২২৬৯ টন, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ধরা পড়েছে ৩৫৯৯৫ টন। ১৯৯৭ সালে ভারতে ৫১৩৭৭ টন, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ৪৪২৫০ টন। ১৯৯৮ সালে ভারতে মোট ৫১৩৭৭ টন, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ৪৭৭৩০ টন। ১৯৯৯ সালে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গে ৩০৭২৬ টন। ২০০১ সালে শুধুমাত্র পশ্চিমবাংলায় ৩২০২৯ টন, ২০০২ সালে ৩৩১০২ টন।
ওপরের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় ইলিশ মাছ খুব কম হলেও ৩০৬২৩ টন এবং খুব বেশী হলে ৪৭৭৩০ টন ধরা পড়েছে। অতএব ইলিশ মাছ শেষ হয়ে যাচ্ছে, এটা ভুল ধারণা।

ইলিশের প্রাপ্তিস্থান — পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, ভিয়েতনাম প্রভৃতি স্থানে।
ভারতের নর্মদা, তাপ্তি, কাবেরী, গোদাবরী, মহানদী, ব্রহ্মপুত্র এবং গঙ্গাতে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়।
ইলিশ মাছের বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নাম আছে। এই মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম— টিউনেনোজিয়া, ইলিশা। উড়িশ্যাতে এর নাম পুশাই, অন্ধ্রপ্রদেশে পানুম বা পানিয়া, আসামে ইলিহি, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে ইলিশ।
এই মাছ প্রায় ৪ বছর জীবিত থাকে। এর মধ্যে এই মাছ দু থেকে তিনবার ডিম পাড়ে। ইলিশ নোনা জলের মাছ হলেও ডিম ছাড়ার জন্য এই মাছ স্বাদু বা মিষ্টি জলে চলে আসে। তার জন্য এই মাছ স্রোতের বিপরীত দিকে দ্রুত গতিতে ছুটে আসে। সম্পূর্ণ স্বাদু জল থেকে অল্পলবণাক্ত জল তাদের ডিম ছাড়ার শ্রেষ্ঠ স্থান। এর জন্যই বেশী বৃষ্টিপাত হলে ইলিশ মাছ নদী ও সাগরের মোহনায় এসে ডিম ছাড়ে। এই মাছ যেখানে তাদের নিরাপত্তা এবং প্রচুর উদ্ভিদকণা থাকে সেই স্থানে স্ত্রী ও পুরুষ এসে প্রজনন ক্রিয়া করে। ডিম পোনার ক্রম বিকাশে পূর্ণাঙ্গ ইলিশ মাছ সৃষ্টি হয়। একটু বড় হলে এই সব চারা মাছ চলে যায় তাদের জায়গায়। আমাদের আরও একটা ভুল ধারণা আছে, যে ইলিশ মরা পচা-গলা খায়। এটা ভুল ধারণ, ইলিশ এ সব খায় না, ইলিশ খায় প্লাংক্টন অর্থাৎ উদ্ভিদ কণা।
বদ্ধ জায়গায় ইলিশ চাষ – বর্তমানে সরকারী উদ্যোগে ২৪ পরগণায় এবং গোবরডাঙায় বেসরকারি উদ্যোগে ইলিশ মাছের খামার করা হয়েছিল, কিন্তু তাতে খুব সফলতা দেখা যায়নি, তার কারণ ঐ জায়গায় ইলিশ মাছের উপযোগী লবণাক্ত নোনা জলের স্রোত এবং দীর্ঘ পথ পরিক্রমার পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি।
ফরাক্কা বাঁধ ও ইলিশ মাছ – অনেকের ধারণা যে ফরাক্কা বাঁধ তৈরী হবার জন্য ইলিশ মাছের উৎপাদন কমে গেছে, আসলে কিন্তু তা নয়। ফরাক্কা বাঁধ তৈরী হবার ফলে জলে বেশী পরিমাণে উদ্ভিদ কণা জমে যাওয়ার ফলে এই মাছের পক্ষে ও অন্যান্য মাছের পক্ষে বেশী জল পাওয়া ও উদ্ভিদ পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। তার ফলে মাছেরা ইচ্ছা মতো এই জলে বিচরণ করতে পারছে। আবার বেশী জল আসার জন্য জলের লবণাক্ত ভাব কমে গেছে। দশ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, ফরাক্কা বাধ হবার পরেই বেশী সংখ্যায় ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে।
জলদূষণ ও বায়ুদূষণ ইলিশ মাছের বাধাস্বরূপ হলেও, পশ্চিমবাংলায় বিচরণশীল ইলিশ মাছগুলির পক্ষে এই সব দূষণ ক্ষতিকারক হয়ে ওঠেনি বা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।
ভারতবর্ষে যত ইলিশ মাছ ধরা পড়ে তার শতকরা ৭০ শতাংশ ধরা পড়ে পশ্চিমবাংলায়। এর কতকগুলি কারণ আছে। সেই কারণগুলি হলো—
১। বর্ষার ফলে প্রচুর জলোচ্ছাস।
২। বর্ষা প্রভৃতির ফলে জলের তাপমাত্রা কমে যাওয়া।
৩। জলের লবণাক্ত ভাব কম হয়ে যাওয়া।
৪। জলে প্রচুর উদ্ভিদ কণা অর্থাৎ প্লাংক্টন থাকা। এই সব কারণের জন্যে
পশ্চিমবাংলায় প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়ে।





Shaharuk Islam

Hi I am Shaharuk Islam. I enjoyed in writing articles and spread knowledge cross over the internet.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

Ad

Magspot Blogger Template

Ad

amazon.in
amazon.in

نموذج الاتصال