![]() |
মাছের খাদ্য তৈরির উপায় ও উপকরণ |
মাছের খাদ্যাভ্যাস (Feeding Habits)
মাছ চাষের জলাশয়ে মাছের খাবার, মাছের পুষ্টি, বৃদ্ধি বা ফলনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অল্প সময়ে মাছের বাড় বা ফলন সম্পূর্ণ নির্ভরশীল মাছের খাদ্য সরবরাহের উপর। প্রাকৃতিক খাবার তো বটেই, সঙ্গে সঙ্গে মাছের সংখ্যার সাথে সুষম পরিপুরক খাবারের যথাযথ সরবরাহ অবশ্যই দরকার। উন্নত পরিচর্যা ও সুস্থ জলীয় পরিবেশে সঠিক মাত্রায় পুষ্টিকর খাবারের যোগান থাকলে মাছের ফলন আশানুরূপ হবেই। প্রাকৃতিক খাবারের সাথে কৃত্রিম খাবারের ব্যবস্থা করার আগে জানা দরকার চাষযোগ্য মাছেদের খাদ্যাভ্যাসের রীতিনীতি। যেমন—
কাতলা :জলাশয়ের উপরতলে (Surface) সর্বোচ্চ ফলনশীল অঞ্চলে থাকে এবং ভাসমান প্রাণীকণা খায়, ভাসমান কৃত্রিম দানা খাবারও খেয়ে থাকে।
রূপালি রুই: ঐ অঞ্চলেই থাকে, উদ্ভিদকণা এদের প্রধান খাদ্য।
রুই ও বাটা : জলাশয়ের মধ্যাঞ্চলে (Column) উদ্ভিদকণা, উদ্ভিদের ছোট আশ পচা গুল্ম, বর্জ্য ইত্যাদি এবং ঐ অঞ্চলের প্রাণীকণা খেয়ে থাকে।
ঘেসোরুই ও জাভাপুঁটি: উদ্ভিদভোজী, জলাশয়ের উপরাঞ্চলে ভাসমান অ্যাজোলা, শুঁড়িপানা, সুজিপানা, তেপাতিপানা, নিমজ্জমান হাইড্রিলা, পাটাশ্যাওলা, ন্যাজাস, পোটামোগেটন ইত্যাদি জলজ ঝাঁঝি খায়। এছাড়া ভাসমান দানা খাবারও খায়, শিশু অবস্থায় জীবকণা খায়।
মৃগেল, কালবাউস, সাইপ্রিনাস : জলাশয়ের নীচে পাকসংলগ্ন অঞ্চলে (bottom) থাকে। এরা পাঁকের কীট, ছোট শামুক, গুগলি, ঝিনুক মরা প্রাণীর দেহাংশ ইত্যাদি খেয়ে থাকে এবং ডুবন্ত পরিপূরক দানা খাবারও খেয়ে থাকে। শিশুকালে জীবকণা খায়।
পাঙ্গাস, চিংড়ি, মাগুর ও শিঙ্গি : জলাশয়ের তলদেশে থাকে। এদের খাদ্যে একধরনের শ্যাওলা, গোবর, মানুষের মল, কীট, পচাগলা প্রাণীর দেহাংশ, ছোটশামুক, গুগলি ও ঝিনুকের মাংস ইত্যাদিই প্রাধান্য পায়, ডুবন্ত দানা খাবারও খায়। শিশুকালে জীবকণা খায়।
চিতল, ভেটকি, শাল, শোল : সকল স্তরেই থাকে। শিকার করে খায়, সম্পূর্ণ মাংসাশী। সবরকমের জীবন্ত ছোট-বড় মাছ, কীটপতঙ্গ, ব্যাঙাচি, ব্যাঙ, ছোট ইঁদুর বা অন্য ছোট প্রাণী এদের প্রধান খাদ্য। শিশুকালে জীবকণা যায়।
![]() |
চিতল মাছ |
পারশে-ভাগন : সম্পূর্ণ শাকাহারী, সব রকম জলজ শৈবাল বা উদ্ভিদকণা এদের মূল খাবার।
তিলাপিয়া: সর্বভূক, কীটপতঙ্গের শুক, কুঁড়ো, খোল, জীবকণা, শ্যাওলা, ছোট পানা ইত্যাদি ও অন্যান্য দানা খাবারও খায়।
প্রজাতি ভিত্তিক ঐ সকল প্রাকৃতিক খাদ্যসামগ্রী চাষযোগ্য জলাশয়ে সর্বদা সমানভাবে প্রয়োজনমত পাওয়া যায় না। তাছাড়া চাষ করা পুকুরের জলে অনেক সময়ই বেশি চারা মজুত থাকে ফলে প্রাকৃতিক খাবারের ঘাটতি হয়। তখনই সেই অভাব পুরণ করার জন্য পরিপুরক সুষম খাবার আবশ্যক হয়ে পড়ে, নইলে ফলন কম হতে বাধ্য।
সুষম খাবারের তিনটি প্রধান পুষ্টি উপাদান হল প্রোটিন (আমিষ), কার্বোহাইড্রেট (শর্করা), ফ্যাট (স্নেহ বা চর্বি); তার সঙ্গে থাকে মিনারেলস্ (খনিজ লবণ) ও ভিটামিন (খাদ্যপ্রাণ)। সুষম কৃত্রিম খাবার তৈরিতে এই উপাদানগুলি নির্দিষ্ট অনুপাতে মেশাতে হয়। সাধারণভাবে বলা যায়-
প্রোটিন (Protein)----------------শতকরা ৩৫-৪০ ভাগ / ৩০ শতাংশ (কমপক্ষে)
শর্করা (Carbohydrates)---------শতকরা ৪৫-৫০ ভাগ / ৬০ শতাংশ প্রায়।
চর্বি (Fat)--------------------------৮-১০ ভাগ / ৫-৭ শতাংশ প্রায়।
খাদপ্রাণ (Vitamins )---------------১ ভাগ/০.৫ শতাংশ।
খনিজ লবণ (Menerals)-------------শতকরা ১-২ ভাগ / ২ শতাংশ প্রায়
![]() |
ঘরোয়া পদ্ধতিতে খাদ্য |
এই অনুপাতে তারতম্য হয় বিশেষ প্রজাতির ডিমপোনা, ধানি, চালা ও পূর্ণবয়স্ক বিভিন্ন মাছ চাষের পরিপূরক খাবারের ক্ষেত্রে।
(ক) আমিষপুষ্টির উপাদানগুলি হল-
(অ) প্রাণীজ (Animal protein)
সব রকমের শুকনো মাছ ও কুঁচো চিংড়ি, কীটপতঙ্গ এবং তাদের শূক, পিউপা, ব্লাডমিল, রক্তকীট, কেঁচো, মাংসের কিমা, শামুক, ঝিনুকের মাংস, পশুপাখির নাড়ি, যকৃৎ (Liver) ইত্যাদি।
(আ) উদ্ভিদ (Plant body protein)
সবরকমের ডালের বেসন, শুকনো সয়াবিন, মাশরুম গুঁড়ো।
(খ) শর্করা (Carbohydrates) পুষ্টির উপাদানগুলি হল-
চালের কুঁড়ো (Bran), ধান, গম, বাজরা, জোয়ার, ভুট্টার গুঁড়ো, সব রকমের তৈলবীজের তেল নিঃসৃত খোল (Oil Cakes)।
(গ) চর্বিজাতীয় পুষ্টির উপকরণ হল (Fats)
সব রকমের ভেষজ তেল, হাঙর ও অন্যান্য মাছের তেল, প্রাণীর চর্বি।
(ঘ) খনিজ লবণ ও খাদ্যপ্রাণ (Mineral & Vitamins ) মাছের দেহবর্ধক প্রয়োজনীয় খনিজ লবণের মিশ্রণ ও বিভিন্ন খাদ্যপ্রাণ সমূহ। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায় যে মাছের মুখ, শুঁড়, চোয়াল, মুখগহ্বর, দাঁত, ফুলকার আকৃতি ও চিরুনি (Raker) ইত্যাদির রকম, অবস্থান ও রূপান্তর তার খাদ্যাভাসের উপর নির্ভর করেই হয়েছে। সেহেতু প্রাকৃতিক খাবারের সংকুলান হওয়া সত্ত্বেও অধিক ফলনের জন্য বিভিন্ন উপাদান সমূহের মিশ্রণে প্রস্তুত সুষম দানা খাবার (Pelleted feed) নির্দিষ্ট হারে প্রয়োগ করা জরুরি।
Fish Production Hatchery(Petla)
Ph-8343889424/7550872484