- 1.মাছ থেকে পিটুইটারি গ্রন্থি সংগ্রহ সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক মাছ থেকে পিটুইটারি গ্রন্থি অপসারণ করা হয়।
- 2.গ্রন্থি পিষে ফেলা ও দ্রবীভূত করাগ্রন্থিগুলোকে পিষে দ্রবীভূত করা হয় নির্দিষ্ট সলভেন্টের সাথে, যাতে গ্রন্থির ভেতরের হরমোন ও অন্যান্য উপাদানগুলো বের হয়ে আসে।
- 3.ফিল্টারেশন ও বিশুদ্ধকরণ পিষে ফেলা দ্রবণ ফিল্টার করে এবং প্রয়োজনীয় হরমোনকে বিশুদ্ধ করা হয়।
- 4.সংরক্ষণ ও প্রয়োগ: প্রস্তুতকৃত নির্যাস সংরক্ষণ করা হয় এবং সাধারণত মাছের প্রজননকে উদ্দীপিত করার জন্য ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়।
পিটুইটারি গ্রন্থির নির্যাস প্রস্তুতকরণ (Preparation of pituitary extract)
এই প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। যেমন-
A. পিটুইটারি গ্রন্থি সংগ্রহ (Collection of pituitary gland): বর্ষাকালে পরিণত মাছ থেকে পিটুইটারি গ্রন্থি সংগ্রহ করা হয়। কারণ ওই সময়ে গ্রন্থিতে প্রজনন সংশ্লিষ্ট হরমোনের সঞ্চয় খুব বেশি হয়। জীবিত বা সদ্যমৃত পরিণত মাছ কিংবা ভালোভাবে বরফে বা ফ্রিজে সংরক্ষিত মাছ থেকেও পিটুইটারি গ্রন্থি সংগ্রহ করা যেতে পারে। কার্পের একই প্রজাতির পিটুইটারি গ্রন্থি (Homoplas- tic pituitary gland) অথবা ভিন্ন প্রজাতির পিটুইটারি গ্রন্থি (Heteroplastic pituitary gland) থেকে সংগ্রহের রেওয়াজ আছে। যা হোক না কেন, সাধারণত দুই প্রকার পদ্ধতিতে গ্রন্থি সংগ্রহ করা হয়।
(1) করোটির উপরিভাগের অস্থি সরিয়ে বোন কাটারের (bone cutter) সাহায্যে করোটির ফ্রন্টোপ্যারাইটল অস্থি (মস্তকের উপরিভাগের অস্থি) অপসারিত করলে মস্তিষ্কটি দেখা যায়। ফরসেপের (চিমটার) সাহায্যে মস্তিষ্কটি তুলে ধরলে ওর অঙ্কীয়দেশে লালচে সাদা বর্ণের পিটুইটারি গ্রন্থি দেখা যাবে।গ্রন্থিটি পর্দাবৃত থাকায় এক সূক্ষ্ম চিমটার (fine tip forceps) দ্বারা প্রথমে পর্দাটি সরানো হয়, পরে ছোটো মটর দানার ন্যায় পিটুইটারি গ্রন্থিটি অক্ষত অবস্থায় সংগ্রহ করা হয়।
pituitary gland |
(ii) ফোরামেন ম্যাগনাম নামক ছিদ্রপথের মধ্য দিয়ে- মস্তক কাটা মাছের পশ্চাৎ অংশে মস্তিষ্কটি যে ছিদ্র পথে স্পাইনাল কর্ডের (সুষুম্নাকান্ডের) সঙ্গে যুক্ত হয় তাকে ফোরামেন ম্যাগনাম (foramen magnum) বলে। প্রথমে একটি স্ক্যালপেলের (ছুরির) সাহায্যে ওই ছিদ্রপথটি বড়ো করা হয়। তারপর একটি বাঁকানো নিডলের সাহায্যে মস্তিষ্কের অঙ্কীয় দেশ থেকে সতর্কতার সাথে গ্রন্থিটি বের করে আনা হয়। বলা বাহুল্য, দ্বিতীয় পদ্ধতিতে গ্রন্থি সংগ্রহ করা অপেক্ষাকৃত সহজ এবং এতে মাছের মস্তক নষ্ট হয় না অর্থাৎ এটি বিক্রির উপযোগী থাকে।
B. পিটুইটারি গ্রন্থির সংরক্ষণ (Preservation of pituitary glands): পিটুইটারি গ্রন্থি সংগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে কাচের শিশিতে 100% অ্যালকোহলে (absolute alcohol) ডুবিয়ে রাখা হয় এবং বায়ু নিরোধক করার জন্য ছিপি দিয়ে দৃঢ়ভাবে বন্ধ করা হয়। 24 ঘণ্টা অন্তর শিশির 100% অ্যালকোহল ফেলে দিয়ে পুনরায় নতুন করে 100% অ্যালকোহল দিয়ে পূর্বের মতো ছিপি দিয়ে শিশির মুখ আটকে রাখতে হয়। উক্ত কাচের শিশিটি কালো কাগজ জড়িয়ে ফ্রিজে রাখলে পিটুইটারি গ্রন্থির কার্যকারীতা দীর্ঘদিন অক্ষত থাকে। জেনে রাখা দরকার- এই গ্রন্থির প্রজননে সহায়ক হরমোন (GTH) জলে দ্রবীভূত কিন্তু 100% অ্যালকোহলে অদ্রবীভূত হওয়ায় উক্ত হরমোনের কোনোরূপ বিকৃতি বা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাছাড়া 100% অ্যালকোহলে রাখার ফলো একদিকে গ্রন্থির ফ্যাট অংশ দ্রবীভূত হয়, অপরদিকে এর ডিহাইড্রেশন (জল বিতাড়ন) সম্পূর্ণ বজায় থাকে। পিটুইটারি গ্রন্থির সংরক্ষণের আর একটি উপায় হল- শুষ্ক বরফ দিয়ে ঠান্ডা করা অ্যাসিটোন (acetone) 5°F তাপমাত্রায় 36-48 ঘণ্টা পর্যন্ত পিটুইটারি গ্রন্থি সংরক্ষণ করা যায়। তবে মাঝে মাঝে পুরানো অ্যাসিটোন পালটে নতুন অ্যাসিটোন দিয়ে রাখতে হবে। এটি নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যেতে পারে।