বাংলা সাহিত্যের আদি যুগ (চর্যাপদ)

 

বাংলা সাহিত্যের আদি যুগ


 

চর্যাপদ :


বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ। চর্যা অর্থ আচরণ। চর্যাপদ বা গানগুলির মাধ্যমে সহজযান (মহাযান বৌদ্ধধর্মে'র শাখা বজ্রযানের অন্যতর শাখা ) মতাবলম্বী গরুরা অর্থ-গোপনীয়তার সাহায্যে নিজ সম্প্রদায়ের শিষ্যদের কাছে আচরণ বা সাধন-উপায় ব্যক্ত করেছেন। অর্থের গোপনীয়তার কারণ ব্রাহ্মণ ইত্যাদি বিধর্মীদের সাধন পদ্ধতি জানানোয় অনীহা।

চর্যাগান সাধন সংগীত। এতে আছে বৌদ্ধ সহজিয়াদের ভাবধারা ও যোগসাধনারা পরিচয়। বাংলা ভাষা তখন সৃজ্যমান। সেই অপরিণত ভাষাস্তরে শৌরসেনী ও মাগধী অপভ্রংশের ছাপ আছে ভাষায়। তার উপর 'সন্ধ্যাভাষা' নামে একটি রহস্যময় হেয়ালিপূর্ণ ভাষায় গানগুলি রচিত। সুতরাং গানগুলির অর্থ সহজে উদ্ধার সম্ভব নয়, অথবা সে-ভাষা আমাদের পরিচিত বাংলাভাষাও নয়। তবু বাংলা সাহিত্যের এই আদিস্তরে বাংলা ভাষার আদির পটি মার্ত হয়েছে চর্যাগানে।

চর্যাগীতির একটি সংকলন 'চর্যাচর্যবিনিশ্চয়'। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপাল রাজের পথিশালা থেকে এটি আবিষ্কার করেন ১৯০৭ খ্রীস্টাব্দে। সংকলনটি একটি অনলিখিত পথি। সম্ভবত চতুর্দশ শতকে এটি নকল করা হয়। পাখিটি প্রাচীন বাংলা ও নেপালী অক্ষরে লিখিত। পাথিটিতে সর্ব মোট পঞ্চাশটি পদ থাকার কথা। কিন্তু পাথি ছিন্ন হওয়ায় ছিচল্লিশটি পূর্ণেপদ ও একটি খণ্ডিত পদ পাওয়া গেছে। পণ্ডিতেরা ভাষাবিচার করে এগুলি দশম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে রচিত বলে সিদ্ধান্ত করেছেন। [ ষাটের দশকে ডঃ শশিভূষণ দাশগুপ্ত নেপাল ও তরাই অঞ্চল থেকে আরও ৯৮টি চর্যাপদ সংগ্রহ করেন যার অন্তত ১৯টি এইকালে রচিত বলে অনমিত।] প্রতিটি পদের উপরে আছে রাগ-রাগিণীর উল্লেখ। নিচে আছে বৌদ্ধ পণ্ডিত মনিদত্ত-কৃত সংস্কৃতে টীকা। চর্যার অর্থ উদ্ধারে এই টীকা বিশেষ সহায়ক।

পদগুলির রচয়িতা লইপাদ, ভস,কপাদ, কাহ্নপাদ, সরহপাদ, শবরপাদ প্রমুখে চব্বিশ জন সিদ্ধাচার্য। এরা ছিলেন বাংলা, মিথিলা, উড়িষ্যা, কামরূপের অধিবাসী। সতরাং চর্যাপদে আছে পূর্বে ভারতের সমকালীন জীবনচিত্র। কবিরা ছদ্মনামই ব্যবহার করেছেন, কিন্তু বুঝতে অস,বিধা হয় না যে তাঁরা ছিলেন তথাকথিত নিম্নবর্ণের লোক ।

ফলে, চর্যায় যে জীবনচিত্র চিত্রিত তা মূলত অস্ত্যজ শ্রেণীরই। তব্দ তৎকালীন - বাংলাদেশের সামগ্রিক জীবনযাপন-রীতির ইঙ্গিত গানগুলিতে লভ্য । সে সমাজে ছিল ব্রাহ্মণদের প্রাধান্য। নিজের জমির আয় ও রাজান, গ্রহ ভোগ করতেন তাঁরা। -অভিজাতেরা ছিল অর্থবান, অনভিজাত শ্রমজীবী মানুষ দারিদ্র্যপীড়িত। কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশে ধান ও তুলার চাষ হত। কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি হত দৈনন্দিন জীবনের নানা উপকরণ। শিকারে জীবিকানির্বাহ করত শবরজাতির লোকেরা। যৌথ পরিবারে বিশ্বাসী ছিল সমাজ। চোর-ডাকাতের উপদ্রব ছিল, দারোগা-কাছারিও ছিল। বিবাহে যৌতুক গ্রহণ ও আড়ম্বর হত। নিম্নবর্ণের মধ্যে ছিল বিধবাবিবাহের প্রচলন। অবসর বিনোদনের উপায় ছিল দাবাখেলা, নৃত্যগীত ও অভিনয় । ব্রাহ্মণেরা বেদানকূেল ধর্মচর্চা করতেন— মন্ত্র- প,জা-জপতপ ছিল তাঁদের দেব-আরাধনার অঙ্গ। নিম্ন বর্ণের মধ্যে লোকায়ত ধর্ম বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে বৌদ্ধ সহজযানের প্রতিষ্ঠা ও বিস্তারে তার পরিচয়।


NurAlam

Hello there! I'm Nur Alam Miah, a passionate and Open-minded individual with a deep love for blog, article,writer. I believe that life is a continuous journey of learning and growth, and I embrace every opportunity to explore new avenues and expand my horizons. In terms of my professional background, I am a Blog Writer with a focus on writing improve. Throughout my career, I have learn unique blog article. I am dedicated to my work.facebooktwitter instagrampinteresttelegramwhatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

Ad

Magspot Blogger Template

Ad

amazon.in
amazon.in

نموذج الاتصال