VITAMINI |
ভিটামিন (VITAMINI
1881 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী সুনিদ (Lunin) প্রথম লক্ষ করেন যে, উপযুক্ত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, জল ও খনিজ লবণ ইত্যাদি গ্রহণ করেও জীবের স্বাভাবিক বৃশি ও পুষ্টি সম্ভব হয় না এবং কিছুদিনের মধ্যেই অপুষ্টিজনিত রোগে জীবের মৃত্যু হয়। সুতরাং জীবের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য বিশেষ এক ধরনের খাদ্য-উপাদানের প্রয়োজন হয়। বিজ্ঞানী হপকিনস্ (Hopkins) এঐ বিশেষ এক ধরনের খাদ্য উপাদানকে 'অত্যাবশ্যকীয় সহায়ক খাদ্য- উপজান "নামে অভিহিত করেন। 1911 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী ক্যাশিমির ফাঙ্ক (Casimir Funk) ঐ খাদ্য উপাদানকে ভিটামিন (vitamin) নামে অভিহিত করেন।
• সংজ্ঞা (Defimtion): যে বিশেষ জৈব পরিপোষক সাধারণ খাদ্যে অতি অল্প পরিমাণে থেকে দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধক শক্তি বুদ্ধি করে, তাকে ভিটামিন বলে।
• ভিটামিনের গুরুত্ব ও কার্যকারিতা (Importance and Functions of Vitamins):
প্রকৃতি হিসেবে বিভিন্ন ভিটামিনের কার্যকারিতা আলাদা আলাদা। ভিটামিনের প্রধান কাজ হল প্রাণীদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ভিটামিন A রাতকানা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে, ভিটামিন B বেরিবেরি ও রক্তহীনতা প্রতিরোধ করে, ভিটামিন রিকেট রোগ প্রতিরোধ করে। ভিটামিন E বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধ করে, ভিটামিন K হেমারেজ বা রক্তক্ষরণ প্রতিরোধ করে এবং ভিটামিন C ও P স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে।
ভিটামিন: স্বাস্থ্য এবং পুষ্টির অপরিহার্য উপাদান
ভিটামিন হলো এমন এক ধরনের জৈব পরিপোষক যা আমাদের দেহের পুষ্টি, বৃদ্ধির জন্য এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনীয় খাবার থেকে আমরা প্রায় সব ধরনের পুষ্টি পেলেও, কিছু পুষ্টি উপাদান বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন হলো সেই উপাদানগুলির অন্যতম, যা শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক।
ভিটামিনের আবিষ্কার
ভিটামিনের ধারণা প্রথম উদ্ভব হয়েছিল ১৮৮১ সালে, যখন বিজ্ঞানী সুনিদ লক্ষ করেন যে, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, জল এবং খনিজ লবণ যথাযথ পরিমাণে গ্রহণ করেও প্রাণীর বৃদ্ধি এবং পুষ্টি বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এরপর গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানী হপকিনস নিশ্চিত করেন যে, কিছু বিশেষ উপাদান জীবের জন্য অপরিহার্য, যা তিনি 'অত্যাবশ্যকীয় সহায়ক খাদ্য-উপজান' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। পরে, ১৯১১ সালে বিজ্ঞানী ক্যাশিমির ফাঙ্ক ঐ বিশেষ উপাদানকে "ভিটামিন" নামে অভিহিত করেন।
ভিটামিনের সংজ্ঞা
ভিটামিন হলো এক ধরনের বিশেষ জৈব পরিপোষক যা সাধারণ খাদ্যে অতি অল্প পরিমাণে থেকে শরীরের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ায়।
ভিটামিনের গুরুত্ব ও কার্যকারিতা
ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা এবং কার্যকারিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলি আমাদের দেহে নানা ধরণের শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপে সহায়ক হয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে বিভিন্ন শারীরিক বিকাশ এবং পুষ্টি বজায় রাখতে ভিটামিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিভিন্ন ভিটামিনের কার্যকারিতা:
ভিটামিন A রাতকানা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে সহায়ক।
ভিটামিন B: বেরিবেরি, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
ভিটামিন C: স্কার্ভি প্রতিরোধ করে, এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
ভিটামিন D: হাড়ের সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক এবং রিকেট প্রতিরোধ করে।
ভিটামিন E: দেহের কোষের সুরক্ষা বজায় রাখে এবং বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধ করে।
ভিটামিন K: রক্তক্ষরণ প্রতিরোধ করে।
ভিটামিনের শ্রেণিবিভাগ
ভিটামিনের দুটি প্রধান শ্রেণি রয়েছে, এগুলি দ্রাব্যতা অনুযায়ী ভাগ করা হয়েছে:
1. জলে দ্রবণীয় ভিটামিন (Fat-Soluble Vitamins): এ ধরনের ভিটামিনগুলি তেলে দ্রবণীয় হয় এবং দেহে চর্বির মাধ্যমে সঞ্চিত থাকে। এদের মধ্যে রয়েছে:
- ভিটামিন A
- ভিটামিন D
- ভিটামিন E
- ভিটামিন K
2.জলে দ্রবণীয় ভিটামিন (Water-Soluble Vitamins): এ ধরনের ভিটামিনগুলি জলে দ্রবণীয় হয় এবং আমাদের শরীরে সঞ্চিত হয় না, তাই নিয়মিত গ্রহণ করতে হয়। এগুলি হলো:
- ভিটামিন B (যেমন, B1, B2, B3, B6, B12)
- ভিটামিন C
ভিটামিনের ঘাটতি এবং ফলাফল
ভিটামিনের অভাবের ফলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, যা অ্যান্টিভিটামিনোসিস নামে পরিচিত। এছাড়াও, যখন শরীরে একটি বা একাধিক ভিটামিনের স্বল্পতা ঘটে, তখন তা হাইপো-ভিটামিনোসিস হিসেবে পরিচিত। আবার শরীরে ভিটামিনের অতিরিক্ততা হাইপার-ভিটামিনোসিস সৃষ্টি করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
অ্যান্টিভিটামিন:
অ্যান্টিভিটামিন হলো সেই সমস্ত জৈব পদার্থ, যা ভিটামিনের কার্যকারিতায় বাধা সৃষ্টি করে বা তাদের সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে। যেমন:
- - ভিটামিন B1-এর অ্যান্টিভিটামিন হলো পাইরিথিয়ামিন।
- - ভিটামিন B2-এর অ্যান্টিভিটামিন হলো গ্ল্যাকটোফ্ল্যাভিন।
- - বায়োটিনের অ্যান্টিভিটামিন হলো অ্যাভিডিন, যা ডিমে পাওয়া যায়।
প্রো-ভিটামিন:
প্রো-ভিটামিন হলো সেই জৈব যৌগগুলি, যেগুলি থেকে শরীর ভিটামিন সংশ্লেষণ করতে পারে। যেমন:
- - B-ক্যারোটিন হলো ভিটামিন A-এর প্রোভিটামিন।
- - আর্গোস্টেরল হলো ভিটামিন D-এর প্রোভিটামিন।
ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্য
ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারগুলো আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, দুধ, ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদি ভিটামিনের চাহিদা পূরণে সহায়ক। যেমন:
- - ভিটামিন A পাওয়া যায় গাজর, পালং শাক এবং লিভারে।
- - ভিটামিন C প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় সাইট্রাস ফলমূল, যেমন কমলালেবু, লেবু।
- - ভিটামিন D-এর জন্য সূর্যালোক প্রধান উৎস হলেও, কিছু ফ্যাটি ফিশ ও ডিমেও এটি পাওয়া যায়।
উপসংহার
ভিটামিন হলো আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য উপাদান, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় রাখতে এবং শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে সহায়তা করে। তাই আমাদের নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে যথাযথ পরিমাণ ভিটামিন গ্রহণ করা উচিত, যাতে আমরা সুস্থ ও সবল জীবনযাপন করতে পারি।