ভিটামিন-A |
ভিটামিন-A: উৎস, পুষ্টিগত গুরুত্ব ও অভাবজনিত প্রভাব
ভিটামিন-A-র রাসায়নিক নাম: রেটিনল (Retinol)
ভিটামিন-A হচ্ছে একটি ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য প্রয়োজনীয়। এর রাসায়নিক নাম রেটিনল। এটি মূলত প্রাণীজ এবং উদ্ভিজ্জ উভয় ধরনের খাদ্য উৎস থেকে পাওয়া যায়। ভিটামিন-A শরীরের সঠিক কার্যকারিতা ও বৃদ্ধি বজায় রাখতে সহায়তা করে।
ভিটামিন-A-র প্রধান উৎস
উদ্ভিজ্জ উৎস
উদ্ভিজ্জ খাদ্যগুলোর মধ্যে গাজর, টমেটো, বাঁধাকপি, পালংশাকসহ বিভিন্ন পাতাযুক্ত শাকসবজি ভিটামিন-A এর প্রাকৃতিক উৎস। এই খাবারগুলিতে ক্যারোটিনোয়েড থাকে, যা শরীরে রেটিনলে রূপান্তরিত হয়। এছাড়াও উদ্ভিজ্জ তেলগুলোতেও ভিটামিন-A এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
প্রাণীজ উৎস
প্রাণীজ উৎসের মধ্যে কড়, হাঙর এবং হ্যালিবাট মাছের যকৃৎ নিঃসৃত তেলে প্রচুর ভিটামিন-A থাকে। তাছাড়া দুধ, ডিমের কুসুম, পাঁঠার যকৃত, মাখন, এবং বিভিন্ন মাছেও এই ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে থাকে। এসব খাদ্য ভিটামিন-A সরাসরি রেটিনল হিসেবে সরবরাহ করে, যা আমাদের দেহে সহজেই শোষিত হয়।
ভিটামিন-A-র পুষ্টিগত গুরুত্ব
ভিটামিন-A আমাদের শরীরে বহু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়ায় সহায়ক হয়, যা আমাদের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।
1.বৃদ্ধিতে সহায়তা: ভিটামিন-A প্রাণীদের সঠিক বৃদ্ধি বজায় রাখতে সহায়তা করে। এর অভাবে শরীরের বিভিন্ন অংশের বৃদ্ধি বিঘ্নিত হতে পারে।
2.রেটিনার রড-কোষ গঠন: রেটিনার রড-কোষ গঠনে ভিটামিন-A অত্যন্ত জরুরি। এটি চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং রাতকানা প্রতিরোধ করে।
3.গ্রন্থি ও আবরণী কলার কার্যকারিতা: ভিটামিন-A শরীরের গ্রন্থি এবং আবরণী কলার কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি ত্বক, শ্বাসনালী এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে।
4.রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ:ভিটামিন-A শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে, যা রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি শ্বাসযন্ত্রের এবং পরিপাক নালির সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
5.অস্থি ও স্নায়ুকলার পুষ্টি: ভিটামিন-A অস্থিকোষের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখে এবং অস্থির বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। স্নায়ুকলার পুষ্টি নিয়ন্ত্রণেও এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
ভিটামিন-A এর অভাবজনিত সমস্যা
যদি শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-A না থাকে, তবে নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সমস্যাগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চোখের, ত্বকের এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর প্রভাব ফেলে।
1.রাতকানা ও জেরথ্যালমিয়া:ভিটামিন-A এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়, অর্থাৎ সন্ধ্যার পর ঠিকমত দেখতে সমস্যা হয়। দীর্ঘদিনের অভাবে জেরথ্যালমিয়া বা সম্পূর্ণ অন্ধত্বও হতে পারে।
2.ফ্রিনোডার্মা (Toad-skin):ত্বক ব্যাঙের চামড়ার মতো খসখসে এবং ফেটে যাওয়া রোগ দেখা দেয়, যাকে ফ্রিনোডার্মা বলা হয়।
3.শ্বাসনালী ও পরিপাক নালির ক্ষয়:শ্বাসনালী ও পরিপাক নালির আবরণী কলা ভিটামিন-A এর অভাবে দুর্বল হয়ে যায়, ফলে এসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঠিক কার্যকারিতা নষ্ট হতে পারে
4. মেরুদণ্ড ও করোটির অস্থি বৃদ্ধি: ভিটামিন-A এর অভাবে মেরুদণ্ড ও করোটির অস্থির বৃদ্ধি বেড়ে যেতে পারে, যা শরীরের স্বাভাবিক বিকাশকে ব্যাহত করে।
5.কেরাটোম্যালেসিয়া: এই রোগে কর্নিয়া বিনষ্ট হয়, যা রাতকানা রোগের আরেকটি পর্যায়। এটি একসময় চোখের দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণরূপে নষ্ট করে দেয়।
6. বৃক্কে পাথর (Renal stone): ভিটামিন-A এর ঘাটতির ফলে বৃক্কে পাথর সৃষ্টি হতে পারে, যা কিডনি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
উপসংহার
ভিটামিন-A আমাদের শরীরের সঠিক কার্যকারিতা, বৃদ্ধি, এবং রোগ প্রতিরোধে অপরিহার্য। এটি চোখের দৃষ্টিশক্তি রক্ষা, ত্বক এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সুরক্ষায় ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন-A এর অভাবজনিত সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে হলে সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে পর্যাপ্ত ভিটামিন-A গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।