বাস্তুতন্ত্রের খাদ্য পিরামিড (Food Pyramid in Ecosystem)
→ কোনো বাস্তুতন্ত্রের খাদ্য-শৃঙ্খলের সঙ্গে যুক্ত পুষ্টির ক্রমপর্যায় অনুসারে প্রত্যেকটি স্তরকে (উৎপাদক, প্রাথমিক খাদক, গৌণ খাদক, প্রগৌণ খাদক ইত্যাদি) পুষ্টি স্তর (trophic level) বলা হয়।
• সংজ্ঞা: কোনও বাস্তুতন্ত্রের পুষ্টি গঠনকে (trophic structure) ক্রমিক পর্যায়ে সাজালে যে পিরামিড গঠিত হয়, তাকে খাদ্য পিরামিড বলে। একথায় খাদ্য পিরামিড হল কোন বাস্তুতন্ত্রের নির্দিষ্ট খাদ্য শৃঙ্খলের রৈখিক প্রকাশ (graphical representation)।
খাদ্য পিরামিডের সবচেয়ে নীচের স্তরে থাকে উৎপাদক, যারা সংখ্যায় বা পরিমাণে সবচেয়ে বেশি হয় এবং সবচেয়ে শিখরে থাকে সর্বোচ্চ খাদক, যারা সংখ্যায় বা পরিমাণে সবচেয়ে কম থাকে।
• শ্রেণিবিভাগ : খাদ্য পিরামিড তিন রকমের হয়, যথা :
A. সংখ্যার পিরামিড (pyramid of number),
B. শক্তির পিরামিড (pyramid of energy), এবং
C. বায়োমাসের পিরামিড (pyramid of biomass) |
A. সংখ্যার পিরামিড (Pyramid of number) : বাস্তুতন্ত্রের সংখ্যার পিরামিড নানান পুষ্টি-স্তরের সংখ্যাভিত্তিক সম্পর্ক নির্দেশ করে। এইরকম পিরামিডের ভূমিতে থাকে নির্দিষ্ট বাস্তুতন্ত্রের সংখ্যাধিক শ্রেণির জীবেরা অর্থাৎ উৎপাদক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত জীব। সংখ্যাভিত্তিক ক্রমপর্যায় অনুসারে বাস্তুতন্ত্রের অন্যান্য শ্রেণির জীবেরা (যেমন : প্রথম শ্রেণীর খাদক, দ্বিতীয় শ্রেণির খাদক, শীর্ষ শ্রেণির খাদক ইত্যাদি) বিন্যস্ত বা সজ্জিত থাকে। সংখ্যাভিত্তিক পিরামিডের শীর্ষ থেকে ভূমি পর্যন্ত, ক্রমপর্যায় অনুযায়ী প্রত্যেকটি পুষ্টি-স্তরের জীবদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে যে, শীর্ষ শ্রেণির খাদকদের সংখ্যার তুলনায় তৃতীয় শ্রেণির খাদকদের সংখ্যা অনেক বেশি। আবার তৃতীয় শ্রেণির খাদকের তুলনায় দ্বিতীয় শ্রেণির, দ্বিতীয় শ্রেণির তুলনায় প্রথম শ্রেণির খাদকদের সংখ্যা বেশি হয়। একইভাবে, উৎপাদকের সংখ্যা প্রথম শ্রেণির খাদকদের তুলনায় অনেক বেশি। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সংখ্যাভিত্তিক শিখরের অনুক্রম অনুসারে শীর্ষ পুষ্টি-স্তরগুলির প্রাণীদের সংখ্যা যেমন হ্রাস পায়, তেমনি আবার তুলনামূলকভাবে তাদের আয়তন বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
B. শক্তির পিরামিড (Pyramid of energy) : শক্তিভিত্তিক পিরামিড কোনো বাস্তুতন্ত্রের নির্দিষ্ট খাদ্য শৃঙ্খলের প্রতিটি পুষ্টি স্তরের সর্বমোট শক্তির পরিমাণকে নির্দেশ করে। এই পিরামিডের ভূমিতে অবস্থিত পুষ্টি স্তরের অর্থাৎ উৎপাদক শ্রেণির সর্বমোট শক্তির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি এবং শীর্ষে অবস্থিত পুষ্টি-স্তরের শক্তির পরিমাণ সবচেয়ে কম হয়। এর কারণ হ'ল, একটি পুষ্টি- স্তর থেকে অপর একটি পুষ্টি-স্তরে শক্তির স্থান পরিবর্তনকালে নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি বিনষ্ট বা হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। স্বভোজী উদ্ভিদেরা সালোকসংশ্লেষকালে আলোকশক্তির প্রায় শতকরা 20% গ্রহণ করে। আবার শাসনকালে নিম্নতম পুষ্টি-স্তর হতে উচ্চতম পুষ্টি-স্তর পর্যন্ত শক্তির হ্রাস ক্রমপর্যায়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। একটি পুষ্টি স্তর হতে অপর একটি পুষ্টি-স্তরে শক্তির স্থানান্তরকালে স্থৈতিক শক্তির শতকরা ৪০% থেকে 90% তাপশক্তিরূপে হ্রাস পায়। সংখ্যাভিত্তিক পিরামিডের ভূমি থেকে শীর্ষ পর্যন্ত উৎপাদক, প্রথম শ্রেণির খাদক, দ্বিতীয় শ্রেণির খাদক, তৃতীয় শ্রেণির খাদক এবং শীর্ষ শ্রেণির খাদক —এই অনুক্রম বর্তমান থাকে।
C. জীবভর ভিত্তিক বা বায়োমাসের পিরামিড (Pyramid of biomass) : এই পিরামিড কোনো বাস্তুতন্ত্রের নির্দিষ্ট খাদ্য-শৃঙ্খলের প্রতিটি পুষ্টি-স্তরের সর্বমোট ভর নির্দেশ করে। সংখ্যাভিত্তিক ও শক্তিভিত্তিক শিখরের মতো জীব-ভরভিত্তিক শিখরের ভূমি থেকে শীর্ষ পর্যন্ত বিভিন্ন পুষ্টি- স্তরের জীব-ভর ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়। কিন্তু পরজীবীদের ক্ষেত্রে জীব-ভরভিত্তিক শিখর বিপরীতমুখী হয়।
প্রশ্ন উওর
1. বাস্তুতন্ত্রের সজীব উপাদানগুলিকে কয় ভাগে ভাগ করা হয়েছে এবং কী কী?
Ans: বাস্তুতন্ত্রের সজীব উপাদানগুলিকে প্রধানত তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেমন: উৎপাদক,খাদক এবং বিয়োজক।
2. উৎপাদক কাকে বলে? বাস্তুনীতিতে উৎপাদক কারা?
• অথবা বাস্তুনীতিতে উৎপাদক বলতে কী বোঝ ? (পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক 1983)
Ans. কোনও বাস্তুতন্ত্রের যে সব জীব নিজেদের খাদ্য নিজেরাই তৈরি করতে পারে এবং যারা বাস্তুতন্ত্রের শক্তিচক্রে খাদ্য-শক্তির যোগানে সক্ষম তাদের উৎপানক বলে।
বাস্তুনীতিতে সবুজ উদ্ভিদরাই হল উৎপাদক।
3. খাদক কাকে বলে? খাদক কয় প্রকার ?
Ans. বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদকের ওপর নির্ভর করে যে সব জীব জীবন ধারণ করে তাদের খাদক
বলে। যেমন: প্রাণী। খাদক তিন রকমের যথা: প্রাথমিক খাদক, গৌণ খাদক এবং প্রগৌণ খাদক।
4. প্রাথমিক খাদক কাকে বলে?
Ans. যে সব খাদক খাদ্যের জন্য সরাসরি উৎপাদক অর্থাৎ সবুজ উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল তাদের প্রাথমিক খাদক বলে। যেমন: কীট-পতঙ্গ, তৃণভোজী প্রাণী ইত্যাদি।
5. গৌণ খাদক কাকে বলে?
Ans. যে সব খাদক খাদ্যের জন্য প্রাথমিক খাদকদের ওপর নির্ভরশীল তাদের গৌণ খাদক বলে। যেমন : ছোট মাংসাশী প্রাণী, পতঙ্গভুক প্রাণী ইত্যাদি।
6. প্রগৌণ খাদক কাকে বলে?
Ans. যে সব খাদক খাদ্যের জন্য গৌণ খাদকদের ওপর নির্ভরশীল তাদের প্রগৌণ খাদক বলে।যেমন : বড় মাংসাশী প্রাণী, বাজপাখি ইত্যাদি।
7. বিয়োজক বা ডিকম্পোসার কাকে বলে? বাস্তুতন্ত্রে বিয়োজক কারা ?
Ans. বাস্তুতন্ত্রের যে উপাদান মৃত উৎপাদক ও খাদকদের বিয়োজিত অর্থাৎ করে জটিল যৌগকে ভেঙে অপেক্ষাকৃত সরল উপাদানে পরিণত করে তাদের বিয়োজক বলে। বিভিন্ন প্রকারের মৃতজীবী জীবাণু (যেমন : ব্যাকটিরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদি) বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্গত।
8. খাদ্য-শৃঙ্খল কাকে বলে?
Ans. উৎপাদক থেকে ক্রমপর্যায়ে শৃঙ্খলাকারে সজ্জিত খাদ্য-খাদক সম্পৰ্কীয় বিভিন্ন প্রাণীগোষ্ঠীর মধ্যে খাদ্য-শক্তি প্রবাহের ধারাবাহিক পদ্ধতিকে খাদ্য শৃঙ্খল বলে।