ভাইরাস (VIRUS):
ভাইরাস কথার শব্দতত্ত্বগত অর্থ 'বিষ' (poison) 1796 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড জেনার ( Jenner) সর্বপ্রথম ভাইরাস আক্রান্ত বসন্ত রোগের কথা উল্লেখ করেন। 1936 খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের ব্যডেন (F. C. Bawden) এবং পিরী (N. W. Pirie) পরীক্ষা করে দেখান যে, ভাইরাসে নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিন আছে এবং ভাইরাসগুলো নিউক্লিও প্রোটিন ছাড়া আর কিছুই নয়।
জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে সর্বত্রই ভাইরাসের অবস্থিতি দেখা যায়। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীদের পৌষ্টিক নালিতে, পানীয়তে, সবজিতে, ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর মলমূত্রে, থুতুতে ভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষণীয়।
ভাইরাসের সংজ্ঞা (Definition of virus) : নিউক্লিওপ্রোটিন দ্বারা গঠিত, অ-কোশীয়, রোগসৃষ্টিকারী, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম, কেবলমাত্র পোষকের দেহেই বংশবিস্তারে সক্ষম জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ের একধরনের বস্তুকে ভাইরাস বলে।
ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of virus) :
1. ভাইরাস জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ের এক রকম রোগ সৃষ্টিকারী বস্তু (organism)।
2. ভাইরাসের দেহে সাইটোপ্লাজম, নিউক্লিয়াস বা নিউক্লিয় বস্তু, কোশ-অঙ্গাণু ইত্যাদি না থাকায় ভাইরাস অকোশীয় (acellular) |
3. ভাইরাস হল অতি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম এক ধরনের অণু-আণুবীক্ষনিক (Sub-microscopic) বস্তু, যা সহজেই অণু-পরিস্রুতির (microfilter) অতি সূক্ষ্ম ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে অতিসহজেই অতিক্রম করতে পারে (ব্যাকটিরিয়া পারে না)।
4. ভাইরাস আকারে এতই ছোটো যে, এদের কেবলমাত্র ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না। *
5. ভাইরাস বাধ্যতামূলক পরজীবী, এদের কর্ম তৎপরতার চক্রে দুইটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র দশা দেখা , যথা : বহিঃ কোশীয় দশা এবং অন্তকোশীয় দশা। বহিঃকোশীয় দশায় ভাইরাস নির্জীব বা জড় বস্তুর মত এবং অন্তঃকোশীয় দশায় ভাইরাস পোষক কোশের মধ্যে সজীব অর্থাৎ সজীব মত জড় আচরণ করে। ভাইরাস পোষক প্রাণীর দেহে নানা রকম রোগ সৃষ্টি করে (যেমন : ইনফ্লুয়েঞ্জা, যায় বসন্ত, পোলিও, এডস প্রভৃতি রোগ)। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য পোষককে আক্রান্ত করার ব্যাপারে ভাইরাসগুলি বিশেষভাবে নির্দিষ্ট (Specific)। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, পোলিও ভাইরাস শুধুমাত্র বাঁদর ও মানুষকে আক্রমণ করে, কিন্তু অন্য কোনো প্রাণীকে করে না।
6. ভাইরাস কেবল পোষক দেহের কোশেই প্রজননক্ষম। পোষক-কোষের বাইরে এরা জড় বস্তুর মত আচরণ করে।
৪. একমাত্র প্রতিলিপি গঠনের (replication) মাধ্যমেই ভাইরাস কণিকার বংশবৃদ্ধি ঘটে।
9. ভাইরাসের নিজস্ব কোনও বিপাক ক্রিয়া করার ক্ষমতা নেই এবং চলন ক্ষমতা নেই।
10. ভাইরাস আয়তনে বাড়ে না এবং বাইরের কোনও উদ্দীপনায় সাড়া দিতে পারে না।
11. ভাইরাসের দেহে নিউক্লিক অ্যাসিড থাকে এবং তা যে কোনও এক রকমের হয়, অর্থাৎ শুধুমাত্র DNA অথবা RNA প্রকৃতির। কখনো কোনও ভাইরাসের দেহে দু'রকমের নিউক্লিক অ্যাসিড একসঙ্গে থাকে না।
ভাইরাসে জড়ের লক্ষণ (Non-living characters) :
1. ভাইরাসের দেহে সাইটোপ্লাজম থাকে না।
2. ভাইরাস কোন বহিঃস্থ উদ্দীপকে সাড়া দেয় না।
3. ভাইরাসের চলন ক্ষমতা নেই।
4. ভাইরাসের দেহে কোনোরকম বিপাক ক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় না।
ভাইরাসে প্রাণের লক্ষণ (living characters of virus) :
1. পোষকের দেহ-কোশে ভাইরাস বংশবিস্তারে সক্ষম।
2. ভাইরাসের দেহে প্রোটিন ও নিউক্লিক-অ্যাসিডের উপস্থিতি লক্ষণীয়।
• ভাইরাসকে অ-কোশীয় বলা হয় কেন?
ভাইরাসের দেহে সাইটোপ্লাজম, নিউক্লিয়াস বা নিউক্লিয় বস্তু, কোশস্থ অঙ্গাণু না থাকায় ভাইরাসকে কোশ বলা হয় না, অর্থাৎ,— ভাইরাস অ-কোশীয়।
• ভাইরাসকে জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ের বস্তু বলা হয় কেন?
ভাইরাস-দেহে দুটি স্বতন্ত্র দশা দেখা যায়, যেমন : বহিঃকোশীয় দশা (extracellular phase) এবং অন্তঃকোশীয় দশা (interacellular phase) । অন্তঃকোশীয় দশায় এরা পোষক কোশের অভ্যন্তরে জীবের মত আচরণ করে ও বংশবিস্তার করে এবং বহিঃকোশীয় দশায় এরা সম্পূর্ণ জড়ের মত আচরণ করে। এই বৈশিষ্ট্যগুলির জন্যই ভাইরাসকে জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ের বস্তু বলা হয়।
ভাইরাসের আকার : ভাইরাস বিভিন্ন আকারের হয়, যেমন :
1. গোলাকার (Spherical) : পোলিও ভাইরাস আকারে গোল, গল্ফ-এর ছোট্ট বলের মত।
2. দণ্ডাকার (Rod shaped) : তামাক পাতার টোবাকো মোজেক ভাইরাস ছোট্ট দণ্ডের মত।
3. ডিম্বাকার (Ovoid) : মাম্পস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগের ভাইরাস ডিম্বাকার।
4. ঘনকাকার (Cuboidal) :গুটি বসন্ত রোগের ভাইরাস (ভ্যাকসিনিয়া ও ভ্যারিওলা) ঘনকের মত।
5. শুক্রাণু বা ব্যাঙাচি আকার (Spermatozoa-shaped or tadpole larva-shaped) : ব্যাক্টরিওফাজ বা ফাজ ভাইরাসের আকার অনেকটা শুক্রাণু বা ব্যাঙাচির মত।
ভাইরাসের বিভিন্ন আকৃতি : ক. মাম্পস ভাইরাস; খ. ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস; গ. হারপিস ভাইরাস;
ঘ. লিউকিমিয়া ভাইরাস, ঙ. অ্যাডিনো ভাইরাস; চ. ভ্যাকসিনিয়া ভাইরাস
ব্যাকটিরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাস বা ব্যাকটিরিওফাজ (Bacteriophage) :
• সংজ্ঞা: যে সব ভাইরাস ব্যাকটিরিয়াকে আক্রমণ এবং ধ্বংস করে, তাদের ব্যাকটিরিওফাজ বা ফাজ ভাইরাস (Phase virus) বলে। ফাজ (phase) কথার অর্থ ভক্ষক (eater)।
[1] ব্যাকটিরিওফাজের উদাহরণ (Example): 1917 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞান দ্য হেরেলী (d'Herelle) ব্যাকটিরিয়া-আক্রমণকারী (বা ভক্ষণকারী) ভাইরাসদের ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস বা ব্যাকটিরিও ফাজ (bacteriophage) বা ফাজ (phage) নামে অভিহিত করেন। এখনও পর্যন্ত যে সব ব্যাকটেরিওফাজের অস্তিত্ব সম্পর্কে ভালো করে জানা গিয়েছে, তাদের মধ্যে ‘T' শ্রেণির (T-series) অন্তর্গত ব্যাকটেরিওফাজই প্রধান। এই শ্রেণির ব্যাকটিরিওফাজদের 1–7 সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে যে, T-শ্রেণির সমস্ত ভাইরাস এসিরিকিয়া কোলাই (E.coli) ব্যাকটিরিয়াকে আক্রমণ করে।
T শ্রেণির সমস্ত (1-7) ব্যাকটিরিওফাজ এক-তন্ত্রী DNA ও প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত। T3 এবং T7 ছাড়া সমস্ত ফাজ ষড়ভূজ আকারের মস্তক এবং দীর্ঘ পুচ্ছবিশিষ্ট এবং দেখতে অনেকটা ব্যাঙের লার্ভার মত হয়। T3 এবং T7 ফাজের পুচ্ছ খুবই ছোট।
T3 এবং T7 ছাড়া অন্যান্য ফাজের পুচ্ছটি দৃঢ় ও সংকোচনশীল আবরণ বিশিষ্ট অথবা নমনীয় ও ব্যাকটিরিওফাজের গঠন সংকোচনশীল আবরণবিহীন হতে পারে। এসেরিকিয়া কোলাই ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণকারী T-ফাজ তাদের শেষপ্রান্তে অবস্থিত কাঁটাওয়ালা (Spike) পাদফলক থেকে উদ্ভূত পুচ্ছতত্ত্বর সাহায্যে পোষকের (ব্যাকটেরিয়ার) দেহে অবস্থান করে এবং কাঁটার সাহায্যে নিজেকে পোষকের দেহে শক্ত করে আটকে রাখে।
নীলাভ-সবুজ শৈবাল আক্রমণকারী ভাইরাসদের সায়ানোফাজ বলা হয়, এরা DNA ভাইরাস। এদের দেহে একটি বহু-পার্শ্ববিশিষ্ট মস্তক এবং একটি দীর্ঘ ও প্যাচানো পুচ্ছ থাকে।
ব্যাকটিরিওফাজের গুরুত্ব (Significance) : ব্যাকটিরিওফাজ (T2) কলেরা, টাইফায়েড, আমাশয় প্রভৃতি রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটিরিয়া দেহে পরজীবী হিসেবে বসবাস করার মাধ্যমে এবং ঐ সব ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াদের ধ্বংস করার মাধ্যমে ঐ সমস্ত রোগ আক্রমণের হাত থেকে পরোক্ষভাবে আমাদের রক্ষা করে, তাই ব্যাকটিরিওফাজকে উপকারী ভাইরাস বলা হয়।
রোগসৃষ্টিকারী ভাইরাসের রোগসংক্রমণ প্রক্রিয়া (Mode of Transmission of Pathogenic Viruses)
ভাইরাস বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে, যেমন : ইনফ্লুয়েঞ্জা, AIDS, পোলিও, জলবসন্ত, মাম্পস্, হাম, এনকেফালাইটিস, জলাতঙ্ক, পা ও মুখের ঘা, জণ্ডিস, ডেঙ্গু জ্বর প্রভৃতি।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (Influenza virus) :
সংক্রমণ প্রক্রিয়া ও রোগ লক্ষণ : এই ভাইরাস প্রধানত মানুষের শ্বসনতন্ত্রকে আক্রমণ করে, ফলে রোগীর হাঁচি, কাশি ও নির্গত মিউকাসের মাধ্যমে ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ সুস্থ মানুষের দেহে সংক্রামিত হয়। এই রোগে প্রথমে অনবরত হাঁচি হয় ও নাক দিয়ে জল পড়ে, পরে প্রচণ্ড গা হাত পা বেদনাসহ তীব্র জ্বর হয়।
ইনফ্লুয়েঞ্জা |
রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা : ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি সংক্রামক রোগ হওয়ায় এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্যদের থেকে আলাদা করে রেখে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসকে প্রতিরোধ করা যায়। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কোন কার্যকরী প্রতিষেধক ব্যবস্থা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি।
HIV ভাইরাসঃ
HIV ভাইরাসের পুরো নাম HTLV-III অর্থাৎ Human T Lymphoropic Virus type-III। এটি মানবদেহে এইড্স (AIDS) রোগ সংক্রমণকারী ভাইরাস, যা মানবদেহের শরীরের সমস্ত রোগপ্রতিরোধী ব্যবস্থা লিপিড বা ইমিউনোতন্ত্রকে একেবারে ধ্বংস করে দেয়। ফলে মানুষ যে কোন সংক্রমণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। AIDS-এর সম্পূর্ণ নাম হ'ল – Acquired Immune Deficiency Syndrome, অর্থাৎ অর্জিত প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হওয়া জনিত লক্ষণ। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় 1 কোটি মানুষ এই সর্বনাশা রোগের কবলে। HIV কেবলমাত্র মানবদেহকেই আক্রমণ করে, মানবদেহের বাইরে এরা এক মিনিটের বেশি বাঁচে না। এই ভাইরাস RNA যুক্ত অর্থাৎ রেট্রোভাইরাস। RNA-এর সঙ্গে রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ উৎসেচক থাকায় এদের RNA, পোষক দেহে DNA-তে পরিবর্তিত হ’তে পারে। এরা ক্ষণে ক্ষণে চরিত্র বদলে নেয়, ফলে এদের বিনাশ কার্যত অসম্ভব। HIV মানুষের রক্তস্রোতে প্রবেশ ক'রে T-লিম্ফোসাইট কোশসমূহকে আক্রমণ করে সব কোশে এরা সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং ঐ কোশগুলি থেকে মুক্ত হয়ে আরও অসংখ্য T লিম্ফোসাইট কোশকে আক্রমণ করে।। T-লিম্ফোসাইট কোশ ধ্বংস হয়ে গেলে মানুষের শরীরের অনাক্রম্যতা ভেঙ্গে পড়ে এবং আক্রান্ত মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়ে যায়।
HIV সংক্রমণ প্রক্রিয়া : HIV আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে একজন সুস্থ লোকের দেহে প্রধানত
(1)যৌন সংসর্গের মাধ্যমে,
(2) HIV আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত বা রক্তজাত পদার্থ, বীর্য অথবা অন্যান্য যৌনক্ষরণজাত পদার্থ, সুস্থ ব্যক্তির রক্ত বা মিউকাস পর্দার সংস্পর্শে এলে;
(3) HIV আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ ও সূচ, কিংবা সেলুন বা অন্য কোথাও দাড়ি কামানোর ব্লেড বা ক্ষুর সুস্থ ব্যক্তি ব্যবহার করলে এবং
(4) গর্ভবতী মায়ের থেকে সন্তানের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে।
HIV ভাইরাস পুরুষ থেকে পুরুষে, পুরষ থেকে স্ত্রীদেহে এবং স্ত্রীদেহ থেকে পুরুষ দেহে সংক্রমিত হয়।
তবে সামাজিক মেলামেশায় AIDS রোগ ছড়ায় না, যেমন : (1) করমর্দন, আলতো চুম্বন, ভিড়ে গা ঘষাঘষি, একই ঘরে থাকা, একে অপরের পোষাক ব্যবহার করা, (2) একই বাসন ও আসবাবপত্র ব্যবহার, আক্রান্ত ব্যক্তির খাবার খাওয়া, একসঙ্গে খেলাধুলা করা, একই শৌচালয় ব্যবহার করা প্রভৃতি। তাছাড়া (3) কীটপতঙ্গ, পশু-পাখির মাধ্যমেও এই রোগ ছড়ায় না।
পোলিও ভাইরাস (Poliomyelitis) :
গোলাকৃতি এই ভাইরাস দ্বারা প্রধানত শিশুরা আক্রান্ত হয়। মাছির মাধ্যমে খাদ্য ও জল থেকে পোলিও ভাইরাস শিশুদের দেহে প্রবেশ করে। এই ভাইরাস রোগাক্রান্ত শিশুর স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে, ফলে শিশুর মস্তিষ্ক ও পেশি অবশ হয়ে পক্ষাঘাত ঘটায়। বর্তমানে (ভ্যাকসিন) ব্যবহারে এই রোগ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা গিয়েছে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উওর
1. ভাইরাস কাকে বলে?
Ans. ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দৃশ্য, নিউক্লিও-প্রোটিন দিয়ে গঠিত, অকোষীয়, জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ের বস্তুকে ভাইরাস বলে।
2. ভাইরাসের দুটি জড়ের লক্ষণ উল্লেখ কর।
Ans. (i) ভাইরাস অকোষীয় এবং
(ii) ভাইরাসের চলন-ক্ষমতা নেই।
3. ভাইরাসের দুটি প্রাণের লক্ষণ উল্লেখ কর।
Ans. (i) ভাইরাসের দেহে প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিড উপস্থিত থাকে।
এবং (ii) ভাইরাস পোষক কোষে বংশবিস্তার করতে পারে।
4. ভাইরাসকে অকোষীয় বলা হয় কেন ?
Ans. ভাইরাসের দেহে সাইটোপ্লাজম, নিউক্লিয়াস বা নিউক্লিয় বস্তু এবং কোষ অঙ্গাণু না থাকায় ভাইরাসকে অকোষীয় বলে।
5. ভাইরাসকে বাধ্যতামূলক পরজীবী বলা হয় কেন?
Ans. ভাইরাস পোষক কোষের বাইরে জড় বস্তু রূপে অবস্থান করে এবং পোষক কোষে পরজীবীরূপে বসবাস করে ও বংশ বিস্তার করে। এই কারণে ভাইরাসকে বাধ্যতামূলক পরজীবী বলে।
6. ভাইরাসকে জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ের বস্তু বলে কেন?
Ans. ভাইরাস বহিঃকোষীয় দশায় জড় বস্তুর মতো আচরণ করে এবং অন্তঃকোষীয় দশায় বংশবিস্তারে করতে পারে, অর্থাৎ জীবের মতো আচরণ করে। ভাইরাসের এরূপ জীব ও জড়ের উভয় বৈশিষ্ট্য থাকায় ভাইরাসকে জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ের বস্তু বলে।
7. নিউক্লিক অ্যাসিডের উপস্থিতি অনুসারে ভাইরাস কত প্রকারের ও কী কী?
Ans. নিউক্লিক অ্যাসিডের উপস্থিতি অনুসারে ভাইরাস দু'রকমের, যথা: DNA যুক্ত ভাইরাস (বসন্ত ভাইরাস, ফাজ ভাইরাস ইত্যাদি) এবং RNA যুক্ত ভাইরাস (ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, TMV ভাইরাস ইত্যাদি)।
8. বংশবিস্তারের প্রকৃতি অনুসারে ভাইরাস কত প্রকারের এবং কী কী ?
Ans. বংশবিস্তারের প্রকৃতি অনুসারে ভাইরাস তিন রকমের, যথা : উদ্ভিদ ভাইরাস (TMV), প্রাণী ভাইরাস (বসন্ত ভাইরাস) এবং ব্যাকটিরিয়া ভাইরাস (ফাজ ভাইরাস)।
9. ব্যাকটিরিওফাজ কাকে বলে?(পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক 1994)
Ans. ব্যাকটিরিয়ার দেহে বংশবিস্তারকারী ভাইরাসকে ব্যাকটিরিওফাজ বা ফাজ ভাইরাস বলে।
10. ফাজ ভাইরাসকে উপকারী ভাইরাস বলার কারণ কী ?
Ans. ফাজ ভাইরাস রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটিরিয়াদের ধ্বংস করে পরোক্ষভাবে আমাদের উপকার করায় ফাজ ভাইরাসকে উপকারী ভাইরাস বলা হয়।
11. আকৃতি অনুসারে ভাইরাস কত প্রকারের ?
Ans. আকৃতি অনুসারে ভাইরাস পাঁচ রকমের, যথা : গোলাকার (পোলিও ভাইরাস), দণ্ডাকার (টোবাকো মোজেক ভাইরাস), ডিম্বাকার (ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস), ঘনকাকার (বসন্ত ভাইরাস) এবং শুক্রাণু-আকার (ফাজ ভাইরাস)।
12. উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে রোগ সৃষ্টিকারী দুটি ভাইরাসের উদহরণ দাও।
Ans. উদ্ভিদদেহে রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস: টোবাকো মোজেক ভাইরাস (TMV), পি মোজেক ভাইরাস
(PMV) প্রাণীদেহে রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস : বসন্ত ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস।
13. উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে ভাইরাস আক্রান্ত দুটি রোগের উদাহরণ দাও।
Ans. উদ্ভিদদেহে ভাইরাস আক্রান্ত রোগ টোবাকো মোজের ও পি মোজেক। প্রাণীদেহে ভাইরাস আক্রান্ত রোগ : বসন্ত ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ।
14. একটি করে উপকারী এবং অপকারী ভাইরাসের উদাহারণ দাও।
Ans. উপকারী ভাইরাস : ফাজ ভাইরাস।
অপকারী ভাইরাস : বসন্ত ভাইরাস।
15. ভাইরাসঘটিত রোগ কিভাবে সংক্রামিত হয়।
Ans. ভাইরাস ঘটিত রোগ প্রধানত বায়ু, জল ইত্যাদির মাধ্যমে সংক্রামিত হয়। ভাইরাস উদ্ভিদদেহে কীটপতঙ্গের সাহায্যে এবং প্রাণীদেহে হাঁচি-কাশি, মল-মূত্র ইত্যাদির মাধ্যমে সংক্রামিত হয়।
16. মাইক্রোরস্ কাকে বলে?
Ans. আণুবীক্ষণিক জীবদের মাইক্রোবস বা জীবাণু বলে।
17. ব্যাকটিরিয়া কাকে বলে?
Ans. এককোষী, সরল, আণুবীক্ষণিক, আদি নিউক্লিয়াস ও কোষপ্রাচীরযুক্ত জীবদের ব্যাকটিরিয়া বলে।
18.দুটি উপকারী ও দুটি অপকারী ব্যাকটিরিয়ার উদাহরণ দাও।
Ans. উপকারী ব্যাকটিরিয়া অ্যাজোটোব্যাকটার ও ক্লসট্রিডিয়াম মাটিকে উর্বর করে। এরা মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে মাটিকে উর্বর করে।
অপকারী ব্যাকটিরিয়া : ভিব্রিও কলেরি - কলেরা টাইফয়েড রোগ সৃষ্টি করে। সালমোনেলা টাইফি— টাইফয়েড রোগ সৃষ্টি করে।
19. গ্রাম পজেটিভ ও গ্রাম নেগেটিভ ব্যাটিরিয়া কাকে বলে?
Ans. যে সব ব্যাকটিরিয়া গ্রাম রঞ্জকে রঞ্জিত হয়, তাদের গ্রাম যেমন : স্ট্রেপটোকক্কাস পজিটিভ ব্যাকটিরিয়া বলে। , স্ট্যাফাইলোকক্কাস, নিউমোকক্কাস ইত্যাদি। যে সব ব্যাকটিরিয়া গ্রাম রঞ্জকে রঞ্জিত হয় না, তাদের গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটিরিয়া বলে। যেমন: গোনোকক্কাস, ভিব্রিও কলেরি, ই. কোলাই ইত্যাদি।
20.মানবদেহে ম্যালেরিয়া রোগ সৃষ্টি করে কোন্ পরজীবী ?
Ans. প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স।
21. ম্যালেরিয়া পরজীবীর বাহক পতঙ্গের নাম কী ?
Ans. স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা।
22.কোন্ আদ্যপ্ৰাণী/ প্রোটোজোয়া মানবদেহে আমাশয় রোগ সৃষ্টি করে?
Ans. এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা।
23. কোন ছত্রাক গমের মরিচা রোগ সৃষ্টি করে ?
Ans. পাকসিনিয়া গ্রামিনিস।
24. কোন্ ছত্রাক আলুর নাবিধসা রোগ সৃষ্টি করে ?
Ans. ফাইটোপথোরা ইনফেসট্যান্স ।
25. কোন্ ব্যাকটিরিয়া মানবদেহে কলেরা রোগ সৃষ্টি করে?
Ans. ভিব্রিও কলেরি।
26. কোন্ ব্যাকটিরিয়া মানবদেহে টাইফয়েড রোগ সৃষ্টি করে?
Ans. টাইফয়েড ব্যাসিলাস বা সালমোনেলা টাইফি।
Q-23. কোন্ ব্যাকটিরিয়া মানবদেহে যক্ষ্মা রোগ সৃষ্টি করে?
. Ans টিউবারকিউলার ব্যাসিলাস (T. B.) বা মাইকোব্যাকটিরিয়াম টিউবারকিউলোসিস।
24. জমির মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে কোন্ ব্যাকটিরিয়া?
Ans. অ্যাজোটোব্যাকটার।
25.একটি মিথোজীবী ব্যাটিরিয়ার উদাহরণ দাও।
Ans. রাইজোবিয়াম।
27. মানবদেহে বসন্ত রোগ সৃষ্টি করে কোন্ ভাইরাস ?
Ans. বসন্ত ভাইরাস।
28.মানবদেহে ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ সৃষ্টি করে কোন্ ভাইরাস ?
Ans. ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস।
29. কোন্ ছত্রাক থেকে পেনিসিলিন তৈরি হয় ?
Ans. পেনিসিলিয়াম নোটেটাম।
30. কোন্ বিজ্ঞানী পেনিসিলিন আবিষ্কার করেছেন?
Ans. আলেকজাণ্ডার ফ্লেমিং।
Q.30. পেনিসিলিন কী ?
Ans. পেনিসিলিন পেনিসিলিয়াম নোটেটাম নামে ছত্রাক থেকে উৎপন্ন এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ।