মনসামঙ্গল কাব্যের কাহিনী

 'মনসামঙ্গলের কাহিনী:
পঞ্চম অধ্যা
মনসা মঙ্গল
মনসামঙ্গলের কাহিনীটি দুটি ভাগে বিভক্ত : দেবখণ্ডনরখণ্ড। 

শিবের মনে সৃষ্টিবাসনা জাগায় কালিয়দহের পাপবনে জন্ম হল এক সন্দরী কন্যার।
শিবের মানসকন্যা বলে তাঁর নাম হল মনসা ।
কেয়া পাতায় জন্ম বলে কেতকা এবং সর্গবিষ হরণের ক্ষমতায় বিষহরি নামেও
পদ্মবনে জন্ম বলে পদ্মা, তিনি পরিচিত। পত্নীর সঙ্গে কলহের ভয়ে শির তাঁকে
প্রথমে নিজগৃহে না আনলেও অবশেষে মনসার আগ্রহে নিয়ে আসতে বাধ্য হলেন।
সেখানে মা-মেয়েতে লাগল বিরোধ। মনসার কোপ দৃষ্টিতে চেতনা হারালেন চণ্ডী,
চণ্ডীর আক্রমণে এক চোখ হারিয়ে 'চ্যাং মাড়ি কানী' হলেন মনসা। হল। জরৎকার,
মনির সঙ্গে তাঁর বিবাহ হল কিন্তু সে বিবাহও দীর্ঘস্থায়ী হল অতঃপর তাঁর
ক্লৈাসবাসের বাসনা দরে না। পুত্রলাভের বরপ্রাপ্ত হয়েই বিবাহবিচ্ছেদ ঘটল।
জয়ন্তী নগরে পরী নির্মাণ করে স্বতন্ত্রভাবে বাস করতে লাগলেন মনসা। এখানেই
'দেবখণ্ডে'র সমাপ্তি।


শিব ও চণ্ডী পূজা পান মর্তে, মনসার পূজো কেউ করে না। মনসা চাইলেন তাঁর পূজাও মর্তে প্রচলিত হোক। ভদ্রসমাজে স্ত্রীদেবতার পূজা প্রচলিত নয় বলে সমাজের নিম্নশ্রেণীর মধ্যেই তিনি প্রথম কৌশলে তাঁর পূজো প্রচার করলেন। তারপর তাঁর লক্ষ্য হল সদাগর চন্দ্রধরকে দিয়ে তাঁর পূজা করানো।

চন্দ্রধর মস্ত ধনী। স্ত্রী সনকা গণবতী। তাঁদের ছয় ছেলে ছয় পত্রবধূ। সপ্ত ডিঙা ভাসিয়ে চাঁদ বাণিজ্য করেন। তিনি শিবভক্ত। শিবকে আরাধনায় অষ্ট করে। "লাভ করেছেন 'মহাজ্ঞান' যা দিয়ে মৃতকেও বাঁচিয়ে তোলা যায়। সাপ তাঁর আজম 'শত্রু,, সাপ দেখলেই হে’তালের বাড়ি দিয়ে তিনি তাকে মারতে যান। কারণ, পূর্বে জন্মে তিনি ছিলেন পজেনীয় রাজা পশ, সখা, সর্প বৈরিতার প্রতিজ্ঞা নিয়ে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। তাঁর চম্পক নগরে ধবস্তীর, শঙ্খ প্রমুখ বিখ্যাত সাপের ওঝাও আছেন । সতরাং মনসা একটি দঃসাধ্য কর্মেই নিয়োজিত হলেন।

সনকাকে দিয়ে মনসাপজো করানোর চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় মনসার সঙ্গে
শত্রু, হল চন্দ্রধরের সরাসরি সংঘাত। চাঁদের চারিত্রিক দৃঢ়তায় ক্ষব্ধ মনসা
তাঁর সাধের বাগান ধ্বংস করলেন; মনসার কোপে মারা পড়ল নগরের সব ওঝা, এমনকি
চাঁদের ছয় পত্র ও তাঁর মহাজ্ঞান অপহৃত হল, বাণিজ্য-যাত্রায় নিমজ্জিত হল
চাঁদের চোদ্দ ডিঙা। ত চাঁদ অনমনীয়। 

 বৃদ্ধ বয়সে চাঁদের লখীন্দর নামে এক পত্রে জন্মাল। আসলে সে অভিশত অনিরদ্ধে। যথাসময়ে সব লক্ষণা বেহলার সঙ্গে বিবাহ হল।কিন্তু চাঁদ-
জানলেন বিবাহের রাতেই পত্রের মৃত্যুযোগ আছে। তার জীবনরক্ষায় রচিত হল
লোহার বাসরঘর। কিন্তু মনসার কৌশলে তাতে ছিল একটি সক্ষেত্র ছিদ্র। মনসার
নির্দেশে সেই ছিদ্রপথে প্রবেশ করে কালনাগিনী দংশন করল লখীন্দরকে। পরদিন
সকালে লখীন্দরের সর্পাঘাতে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ল। নগরীতে বইল শোকের
ঝড়।


মৃত স্বামীর দেহ সঙ্গে নিয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বেহুলা কলার ভেলায় ভেসে চললেন: অজানা নদীপথে। তাঁর প্রতিজ্ঞা স্বামীকে তিনি পুনর্জীবিত করবেনই। নানা... প্রলোভন ও বিপদ তুচ্ছ করে ভেসে চললেন বেহুলা। এদিকে লখিন্দরের দেহাবশেষ। বলতে তখন কয়েকটি অস্থি। তাকেই কাপড়ে বেধে নিয়েছেন বেহুলা। অবশেষে ছ'মাস পরে বেহুলার ভেলা এসে পৌঁছল স্বর্গে নেতা ধোবানির ঘাটে। শিবের অশ্র জাত বলে তার নাম নেত্রবর্তী বা নেতা। সে স্বর্গের দেবতাদের কাপড় কাচে । অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারিণী সে। তা লক্ষ্য করে বেহুলা তার শরণ নিলেন। আসলে নেতা ছিল মনসার সহচরী। তার সাহায্যে বেহুলা দেবসভায় যেতে। পারলেন। সেখানে নৃত্যগীতের মাধ্যমে তিনি দেবতাদের মন জয় করলেন। দেবতারা তাঁকে বর দিতে চাইলে তিনি চাইলেন স্বামীর জীবন ভিক্ষা। শিবের আদেশে মনসা তা দিতে স্বীকার করলেন, তবে একটি শর্তে। চাঁদকে করতে হবে মনসাপজো । বেহলা বশরকে রাজি করাবেন এই অঙ্গীকার করে স্বামীকে ফিরে পেলেন। সেইসঙ্গে খুশি হয়ে মনসা চাঁদের ছয় পাত্রেরও জীবন দান করলেন এবং... সব নিয়ে বেহুলা মর্তে ফিরে এলেন। ফিরিয়ে দিলেন নিমজ্জিত ডিঙাগালি। বেহুলার পাতিত্রত্য ও সতীত্বের কথা রাষ্ট্র হল চম্পকনগরে। সনকার মাত হৃদয় অস্থির হল পত্রমূখে দর্শনে। তিনি ছটে এলেন ঘাটে। বেহুলা নিবেদন করলেন শর্তের কথা, হয় চাঁদকে মনসাপ, জা করতে হবে, নতুবা সব নিয়ে বেহুলাকে ফিরে যেতে হবে দেবপরীতে। পরুষকারে অটল চাঁদ এখনো নারাজ। যে হাতে শিবের পূজা করেন। সকলে দেখল সমূহ বিপদ, তিনি, সে হাতে কেমন করে করবেন মনসার পূজা।

শঙ্কিত হলেন মনসাও। অবশেষে সন্ধি হল। চাঁদ বাম হাতে পিছন ফিরে মনসার উদ্দেশে পূজোর পাম্প নিবেদন করবেন, যেখানে দেবীর ঘটের উপরে থাকবে ‘চাঁদোয়া। এতেই তষ্টে মনসা। এভাবেই চাঁদের মনসাপুজো সমাধা হল এবং সেই সঙ্গে মর্তে মনসা পূজা ব্যাপকভাবে প্রচলিত হল। পাপভ্রষ্ট অনিরুদ্ধ ও ঊষা ( লখীন্দর বেহালা) কিছুকাল পরে ফিরে এলেন স্বর্গ রাজ্যে। এখানেই কাব্যটির 'নরখণ্ডে'র সমাপ্তি।

NurAlam

Hello there! I'm Nur Alam Miah, a passionate and Open-minded individual with a deep love for blog, article,writer. I believe that life is a continuous journey of learning and growth, and I embrace every opportunity to explore new avenues and expand my horizons. In terms of my professional background, I am a Blog Writer with a focus on writing improve. Throughout my career, I have learn unique blog article. I am dedicated to my work.facebooktwitter instagrampinteresttelegramwhatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

Ad

Magspot Blogger Template

Ad

amazon.in
amazon.in

نموذج الاتصال