মাগুর মাছ |
মাগুর মাছ হল আমাদের দেশের অন্যতম উল্লেখযোগ্য জিওল মাছ। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, চীন দেশে পাওয়া যায়। এরা অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্রের সাহায্যে শ্বাসকার্য চালাতে পারে তাই খুব কম অক্সিজেনযুক্ত জলে সহজেই বসবাস করতে সক্ষম। এই মাছের মাথা উপর-নীচে চাপা ও শরীর পার্শ্ব বরাবর চাপা। উপরের চোয়াল নীচের চোয়ালের চেয়ে অনেক বড়। চারজোড়া শুঁড় বা বার্বেল আছে। পৃষ্ঠপাখনা পুচ্ছপাখনা বা লেজ পর্যন্ত বিস্তৃত। শরীরে কোন আঁশ থাকে না, পৃষ্ঠদেশ গাঢ় খয়েরি ও অঙ্কীয়দেশ হলুদাভ হয় ।
শিঙ্গি ক্যাটফিস |
যে জলাশয়ে গ্রীষ্মে জল থাকে না, যেখানে রুই, কাতলা ইত্যাদির চাষ সম্ভব নয় সেখানে খুব সহজেই শিঙ্গি-মাগুর চাষ করা যায়। পাকহীন বা অল্প পাকযুক্ত ছোট অগভীর জলাশয় সেখানে বর্ষার পর ৪/৫ মাস জল থাকে সেগুলিই শিঙ্গি-মাগুর চাষের উপযুক্ত। আঁতুড় পুকুর, চৌবাচ্চা, নয়নজুলিও নির্বাচন করা যেতে পারে। সাধারণত শীতের শুরু থেকে বর্ষার আগে পর্যন্ত সময়টি হল শিল্পি-মাগুর চাষের আদর্শ সময়।প্রযুক্তিমত পুকুর পাট বা তৈরি করার পর জল মাছ চাষের উপযুক্ত মনে হলে আঙ্গুল বা সামান্য বড় (৩-৪ ইঞ্চি) শিঙ্গি ও মাগুরের চারা জোগাড় করতে হবে। বর্ষার শেষে ধানের জমি বা মাঠ, বিল, বাওড় ইত্যাদি থেকে চারা সংগ্রহ করা যায়। পশ্চিমবঙ্গের মালঞ্চ, ক্যানিং, বসিরহাট, ইটিন্ডাঘাট, কাঁথি, তমলুক, হুগলি, বর্ধমানের বাজারে, কুচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের হাটে বর্ষার পর চারা কিনতে পাওয়া যায়।
👉 আরো পড়ুন :- মাছ সম্পর্কে ধারনা বা পরিচয় , প্রকারভেদ , শ্রেণী বিভাগ | Concept or identity about fish, types, classification in bengali
তাছাড়া কৃত্রিম প্রজননে (artificial breeding) উৎপন্ন মাগুর, শিঙ্গির ধানি কিনে চৌবাচ্চায় পালন করে বড় করে নেওয়া যায়। সাধারণত ৩-৪ ইঞ্চি, ওজনে ৮-১০ গ্রাম মাগুর ও শিঙ্গি (৪-৫ ইঞ্চি) ওজন ৭-৮ গ্রাম হলে ভাল হয়। শতক প্রতি ঐ মাপের ৩০ – ৪০টি - চারা ছাড়তে হবে। চারা ছাড়ার আগে একটি পাত্রে জল নিয়ে তাতে লিটার প্রতি ১০ ফোঁটা ফরমালিন দিয়ে চারাগুলোকে ৪/৫ মিনিট ডুবিয়ে অপর একটি পাত্রে এক্রিফ্লেবিন দ্রবণে ডুবিয়ে শোধন করে নিতে হবে।মাছ ছাড়ার পর থেকে সুষম পরিপূরক খাবার দিয়ে যেতে হবে। খাবার মূল উপাদান হওয়া চাই আমিষ (protein) ৩৫-৪০ ভাগ; যেমন- ফিসমিল, কেঁচো, মুরগির নাড়ি কুচানো শামুক ঝিনুকের মাংসের কিমা ইত্যাদি শর্করা (Carbohydrate) ৪৫-৫৫ ভাগ,যেমন, ভাল কুঁড়ো, চালের খুদ দিতে হবে। এছাড়া বাদাম খোল, কাঁচা গোবর ইত্যাদি দিতে হবে। আর খনিজ লবণ ও খাদ্যপ্রাণ ৫ ভাগ অথবা বাজারে লব্ধ খাবার দিনে ২ বার, চারা মাছের ওজনের ৮–১০ শতাংশ হারে দিতে হবে। মোট খাবারের তিন ভাগের ১ ভাগ সকালে ও ২ ভাগ সন্ধ্যার মুখে দিতে হবে। এরা রাত্রে খাবার খেতে অভ্যস্ত। প্রতি সপ্তাহে খেপলা জাল (Castnet) দিয়ে মাছের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধি দেখতে হবে। মাছের বৃদ্ধির সাথে খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। পরিচর্য্যার অব্যবস্থা ও জলাশয় তলদেশে জৈববর্জের বৃদ্ধিতে জল গাঢ় সবুজ ও নীল হলে খাবার বন্ধ করে কিছু জল তুলে ফেলে দিয়ে সেই পরিমাণ পরিষ্কার জল ভরে দিতে হবে। পরিচর্যাগুণে ৫–৬ মাসে শিঙ্গি ৫০ – ৬০ গ্রাম ও মাগুর ১০০-১২০ গ্রাম হয়ে যাবে।
ঘরে তৈরি মাগুরের ও শিঙ্গির খাবার (প্রতি কেজি খাবারের উপাদান)
মাগুর খুদের ভাত ২৫০ গ্রাম,ভালো কুঁড়ো ৩০০ গ্রাম,ফিস মিল ২৫০ গ্রাম,নাড়ি ও মাংস কিমা ১৭৫ গ্রাম,হাঙ্গর তেল ১৫ গ্রাম,খনিজ লবণ ও খাদ্যপ্রাণ ১০ গ্রাম।
শিঙ্গি ভালো কুঁড়ো ২০০ গ্রাম,খুদের ভাত ১৫০ গ্রাম,বাদাম খোল ১৫০ গ্রাম,ফিস মিল ১৫০ গ্রাম,নাড়ি ও মাংস কিমা ১২৫ গ্রাম,হাঙ্গরের তেল ১৫ গ্রাম,খনিজ লবণ ও খাদ্যপ্রাণ ১০ গ্রাম,কাঁচা গোবর ২০০ গ্রাম,খনিজ লবণ ও খাদ্যপ্রাণ ১৫ গ্রাম।
👉 আরো পড়ুন :- দেশী মাগুর ও শিঙ্গি মাছের সংরক্ষন ও পরিপালন/Conservation and rearing of indigenous Magur and Shingi fish in Bengali